জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের (ইসলামিক স্টেট) হয়ে শিরশ্ছেদ, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে লিবিয়ায় একটি আদালত। এ সময় অন্য ১৪ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ মে) এ রায় ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার (৩০ মে) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরা’র এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়ার সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আদালত পাঁচজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। আর বিচার চলার সময় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
২০১৫ সালে দেশটির সিরতে শহর দখলের সময় একটি খ্রিস্টান পরিবারের সদস্যদের শিরশ্ছেদ করাসহ শহরটিতে চালানো নির্বিচারে হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে আইএস সদস্যদের বিরুদ্ধে।
ইরাক ও সিরিয়ার পর তখন এই লিবিয়াতে ছিল আইএসের শক্তিশালী ঘাঁটি। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে ২০১১ সালে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর ইন্ধনে গণ–অভ্যুত্থান শুরু হলে দেশটিতে ব্যাপক অরাজকতা ও হত্যাকাণ্ড চালায় আইএসের সদস্যরা।
এসময় আইএসের লিবিয়া শাখা তৎপর হয়ে ওঠে।
তারা ২০১৫ সালে ত্রিপোলির একটি হোটেল হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে। এর আগে আইএস জঙ্গিরা বেশ কয়েকজন মিসরীয় খ্রিষ্টানকে অপহরণ ও পরে শিরশ্ছেদ করে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভিডিওতে ধারণ করে প্রচারও করা হয়।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আজদাবিয়া, দেরনা ও বেনগাজির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আইএস জঙ্গিরা উপকূলীয় শহর সিরতে দখল করে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। ওই সময় ‘নৈতিকতা ভঙ্গের’ অভিযোগে বহু মানুষকে বর্বরোচিত সাজা দেয়া হয়।
রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। আইএসের নিপীড়ন ও নির্যাতনে দুই ছেলেকে হারানো মা ফাতেমা বেইতেলমাল বলেন, এমন রায়ে আমার ছেলেদের বিদেহী আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। আমার দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের পর আমি এখন পর্যন্ত ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। আমি নিজের চোখে রায় দেখে যেতে পরেছি। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।
আইএসের নৃশংসতার শিকার মুস্তাফা সালেম ত্রাবুলসি নামের এক ব্যক্তি আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে নিখোঁজ। আমার এক আত্মীয়কে সিরতে স্কয়ারে হত্যা করা হয়েছে।’
ফাউজিয়া আরহুমা নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সিরতের কাছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে তার ছেলেকে আইএস জঙ্গিরা হত্যা করে। আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানান সন্তানহারা এই মা।