আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

টাকার অভাবে মুমূর্ষু শিশুকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিলো কর্তৃপক্ষ

টাকার অভাবে মুমূর্ষু শিশুকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিলো কর্তৃপক্ষ

দেড় লাখ টাকা বিল দিতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিষ্টুর আচরণে প্রাণ গেলো ৬ মাসের এক শিশুর।  

রাজধানীর শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালের পি-আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু দুই যমজ শিশুকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এক ভাই। আরেক ভাইয়ের অবস্থাও সংকটাপন্ন। সন্তানের মৃত্যুর জন্য ‘আমার বাংলাদেশ’ নামের হাসপাতালটিকে দায়ী করেছেন শিশুটির মা।
 
যমজ দুই সন্তানের একজনের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে, আরেকজনকে বাঁচাতে মায়ের প্রাণপণ চেষ্টা। তার আর্তনাদে ভারী ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগের পরিবেশ।
 
৬ মাসের যমজ দুই সন্তান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ভর্তি করা হয়েছিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। দালাল অ্যাম্বুলেন্স চালকের খপ্পরে পড়ে শিশু দুটিকে নেওয়া হয় পাশেই শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
 
তিন দিন পর বড় অঙ্কের বিল ধরিয়ে দিলে তা দিতে না পারায় আইসিইউ থেকে যমজ দুই মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বের করে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। এরপর ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় শিশু আহমেদ।
 
শিশুর মা জানান, অ্যাম্বুলেন্স চালক অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে বলেন আমার একটি পরিচিত হাসপাতাল আছে, ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দীতে যদি ৫ টাকা খরচ হয় ওখানে ৭ টাকা খরচ হবে। তখন বলি আমি গরিব মানুষ বেশি টাকা হলে দিতে পারব না। পরে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৫ হাজার টাকা দিছি টেস্টে ও আরও ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম ওষুধে। ৭২ ঘণ্টা পর আমাকে বিল দেয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার পরে আমার কাছে আরও ৬০ হাজার টাকা চায়। আমি টাকা দিতে না পারায় আমাকে গালাগালি দিয়ে আমার সন্তানসহ আমাকে হাসতাপাল থেকে বের করে দেয়।
 
তার আরেক শিশু আবদুল্লাহর অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, আমরা বাচ্চাটাকে অনেক খারাপ অবস্থায় পেয়েছি এবং সেটার জন্য এখানে ভর্তি করে যাবতীয় চিকিৎসা আমরা শুরু করেছি।
 
এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাসপাতালের এক কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ।

 


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমরা তাকে পুলিশ ক্যাম্পে রাখছি।

অন্যদিকে, পুরো ঘটনা অস্বীকার করে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা উল্টো দায় চাপিয়েছেন যমজ শিশুর পরিবারের ওপর।
 
আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহানি ইকবাল বলেন, আমরা প্রথমে বাচ্চাটার জ্বর মাপার চেষ্টা করি কিন্তু রোগীরা কিছু টেস্ট করাতে প্রথমে তারা অস্বীকার করে। তাদেরকে আসলে বের করা হয়নি, আর টাকার ব্যাপারটা আমি বলতে পারব না।
 
আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক মো. সোয়েব খান বলেন, উনি যে অভিযোগটা দিয়েছেন সেটার জন্য কাগজপত্র দেখেন। টাকার রশিদ বিল দেখেন।
 
আমার বাংলাদেশ নামের ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

 

মুক্তা মাহমুদ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন টাকার | অভাবে | মুমূর্ষু | শিশুকে | হাসপাতাল | বের | করে | দিলো | কর্তৃপক্ষ