আর্কাইভ থেকে ফিচার

এখনো বিশ্বের ৮১ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত!

এখনো বিশ্বের ৮১ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত!
১৯৯৩ সালের কথা। সে বছর মার্চ মাসে দক্ষিণ সুদানের ঊষর প্রান্তর থেকে ছবিটি তোলা হয়েছিলো। ছবিতে দেখা যায় টলোমলো পায়ে এগিয়ে আসছে একরত্তি এক জীবন্ত ছোট্ট শিশুর কঙ্কাল। তার দুর্বল পা থরথর করে কাঁপছে। জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের দিকে গুটিসুটি মেরে এগোতে চেষ্টা করছে সে। হঠাৎ মাথা নিচু করে মাটিতে বসে পরে শিশুটি। ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে তিন বছয় বয়সী ওই শিশু। তার ঠিক পেছনে নিঃশব্দে এসে নেমেছে এক শকুন। পায়ে পায়ে এগোচ্ছে তার দিকে। শকুনটি যেন নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে শিশুটি জীবিত, না মৃত। মৃত্যু নিশ্চিত হলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে শিশুর উপর। ছিন্নভিন্ন করে খাবে শিশুর মরদেহ। দুর্ভিক্ষের সেই গায়ে কাঁটা দেয়া ছবিটি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার চিত্র সাংবাদিক কেভিন কার্টার। ছবিটির জন্য পুলিৎজার পুরষ্কারও পান তিনি। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত হয় তার সেই বিখ্যাত ছবি। ছবিটির শিরোনাম ছিলো ‘দ্য ভালচার অ্যান্ড দ্য লিটল গার্ল’। এই সুখ বেশিদিন তার কপালে ছিলো না। নিজের তোলা ছবিটি যেন তার কাল হয়ে দাঁড়ালো।‘দ্য ভালচার অ্যান্ড দ্য লিটল গার্ল’ রাতের ঘুম কেড়ে নেয় কেভিন কার্টারের। পুরস্কার পাওয়ার তিন মাস পর বিষণ্নতায় ভুগে আত্মহত্যা করেন ৩৩ বছর বয়সী কেভিন। কার্টারের ছবিটি বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়া দিলেও এখনও সচেতন হয়নি বিশ্বের অনেক মানুষ। এখনও সারাবিশ্বে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। জানেন কি? প্রতি রাতে বিশ্বের ৮১ কোটি ১০ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমায়। বলছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসেব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে গোটা বিশ্বেই খাদ্যসংকট প্রবল হবে। আফ্রিকার ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, দক্ষিণ মাদাগাস্কার ও ইয়েমেনে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভয়ানক রূপ নিয়েছে। সেসব দেশে  অনাহারজনিত মৃত্যু বাড়ছে। বৈশ্বিক মন্দা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে পৃথিবীতে। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়া ও পানির অপ্রাপ্যতার কারণে এশিয়ার কিছু অংশে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় ফসল উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যাবে। অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতেও বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য অপচয় হচ্ছে। মানুষের খাবার ফেলে দেয়া হচ্ছে ডাস্টবিনে কিংবা নর্দমায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গবেষণা বলছে, পৃথিবীর মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় তিনভাগের এক ভাগই অপচয় হয়। যা বছরে প্রায় ১৩০ কোটি টন। অথচ অপচয় এসব খাবারের চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে  ৮৭ কোটি দুস্থ মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।      

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন এখনো | বিশ্বের | ৮১ | কোটি | মানুষ | ক্ষুধার্ত