স্বাস্থ্যগত সমস্যার সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কিশোরীরা। বিশেষ করে, প্রথমবার পিরিয়ডে চরম ভীতির মধ্যে থাকে তারা। এ সময়ে কিশোরীরা কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু এসব কথা বাবা কিংবা বড় ভাইকে বলতে পারে না। মা ও বড় বোনও তেমন গুরুত্ব দেয় না। ফলে নীরবেই সয়ে যেতে হয় সব সমস্যা। এদিকে পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার পুষে রেখেছেন অনেকেই। পিরিয়ড হলে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এমনকি মাছ, গোস্ত খেতেও মানা রয়েছে।
তাড়াশের কুন্দইল কিশোর-কিশোরী ক্লাবের একদল কিশোরী বয়ঃসন্ধীকালীন স্বাস্থ্যগত সমস্যার জরিপ করেন। এলাকাগুলো হলো- সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল, কামারশন ও মাকরশন গ্রাম। এ জরিপ কাজে ১৫ জন কিশোরী ১০৭ জন কিশোরীর পিরিয়ডকালীন সময়ের নানা সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। জরিপকৃত কিশোরীদের বয়সসীমা- (১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী) ৭৯ জন। (১৬ থেকে ১৯ বয়সী) ছিল ২৮ জন। তারা সবাই শিক্ষার্থী।
জরিপের আওতাভুক্ত ১০৭ কিশোরীর মধ্যে ৭৭ জনের কথা জানিয়ে সংস্থাটির এক সদস্য বলেন, পিরিয়ড নিয়ে মা-বাবা, ভাই, বোন কেউ তাদের আগে থেকে বলেনি। বরং পিরিয়ড হলে মাছ, মাংস খাওয়া যাবে না। ব্যবহৃত কাপড় লোকজনের চোখের সামনে রোদে শুকাতে দেয়া যাবে না। মানুষ মারা গেলে যাওয়া যাবে না। বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবেনা, ভূত-পেত ধরাসহ নানা কুসংস্কারের মধ্যে রেখেছেন।
পৌরসভার কাউন্সিলর ও সমাজসেবী রুখসানা পারভীন বলেন, গ্রামীণ সমাজের বেশিরভাগ লোকজনের বয়ঃসন্ধীকালীন স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কোন ধারণা নেই। পিরিয়ডের সমস্যাগুলো তারা গতানুগতিক ভেবে থাকেন। বহুকাল ধারে এভাবেই চলে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার গুরুত্ব আরোপ করেন এই উন্নয়ন কর্মী।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা নাসরীন বলেন, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধীকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে শিক্ষা দেয়া হয়। পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা জোরদার করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ক্লাবটি প্রত্যেক কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে এ জরিপ করেছেন। এ কাজে অর্থায়ন করছে ইউএনএফপিএ। সহযোগিতা দিচ্ছে কেয়ার বাংলাদেশ। লিড এনজিও হিসেবে সঙ্গে আছে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র। বাস্তবায়ন করছে ‘পরিবর্তন’ নামে একটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
এএম/
