আর্কাইভ থেকে জাতীয়

টানা কর্মবিরতিতে শ্রমিকরা, মধ্যেরাতে ট্রেন বন্ধের আশঙ্কা

টানা কর্মবিরতিতে শ্রমিকরা, মধ্যেরাতে ট্রেন বন্ধের আশঙ্কা
দফায় দফায় আন্দোলন করেও ‘মাইলেজ সুবিধা’ পুনর্বহালের দাবি আদায়ে সফল হতে পারেননি রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব এমনকি রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করলেও ইতিবাচক কোনো ফল পাননি তারা। ফলে মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন প্রদান ছাড়াও আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় এবার টানা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। আজ রোববার (২৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে (১২টা) থেকে এই কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তারা। এতে রাত থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেলওয়ের রানিং স্টাফরা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী হেডকোয়ার্টারে তাদের ৮ ঘণ্টার ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম করার কথা। কিন্তু কর্মী সংকট থাকায় তারা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম করার পর আবারও কাজে নেমে যেতেন। রেলের কর্মীরা রেলের স্বার্থে কাজ করতে চান। কিন্তু রেলওয়ে তাদের স্বার্থের বিষয়ে আন্তরিক নয়। এর প্রতিবাদেই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়েও কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়। এর পরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা। মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা। এ নিয়ে দফায় দফায় আন্দোলন-কর্মবিরতিও পালন করেন। তবে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা। কর্মচারী সমিতি জানিয়েছে, প্রায় ১৬০ বছর ধরে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়। এ নিয়ে পরবর্তীকালে রানিং স্টাফরা রেলমন্ত্রী, রেল সচিবসহ রেলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করে প্রাপ্যতার বিষয়ে আইনি ভিত্তি ও যুক্তি তুলে ধরেন। পরে রেল কর্তৃপক্ষ রানিং স্টাফদের দাবির যৌক্তিকতা অনুধাবন করে অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার চিঠি দেন এবং প্রাপ্যতার বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীকালে ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর রেলমন্ত্রী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু গত ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২০ আগস্ট দাবির বিষয়ে রেলমন্ত্রী, সচিব এবং রেলওয়ে মহাপরিচালক আমাদের ডেকেছিলেন। আমাদের সব অঞ্চলের নেতাকর্মীরা সেদিন উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে বসে কথা বলেছি। আমরা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি, আর এরই মধ্যে ওনাদের প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে। মজিবুর রহমান বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, এটা ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। ১৬০ বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। আমরা ওনাদের বারবার সময় দিয়েছি, বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। দাবি আদায়ের এই আন্দোলনকে ‘অধিকার আদায়ের লড়াই’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলছি। আমাদের এবারের আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য। আমরা তাদের সঙ্গে আর আলোচনায় যেতে রাজি নই। কারণ সর্বশেষ আলোচনাটা ফলপ্রসূ হয়নি। ২৮ তারিখ রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আমরা টানা কর্মবিরতি শুরু করব। এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামরুল আহসান বলেন, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের সঙ্গে মন্ত্রী মহোদয়ের মিটিং হয়েছে। তিনি স্টাফদের অনুরোধ করেছেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। আমরাও এটাই জানি। আমরা এখনো তাদের সঙ্গে কথা বলছি। সার্বিক বিষয়ে জানতে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন টানা | কর্মবিরতিতে | শ্রমিকরা | মধ্যেরাতে | ট্রেন | বন্ধের | আশঙ্কা