শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার এক বিবৃতি দিয়ে সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শ্রম আইন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বিবৃতিতে সংস্থাটির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, ড. ইউনূসের মামলাটি বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিপর্যস্ত অবস্থার প্রতীক। যেখানে কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতা খর্ব করেছে এবং সমালোচকদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে।
গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ড. ইউনূসসহ বোর্ডের অপর তিন সদস্যের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন সংক্রান্ত একটি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। বোর্ডের অপর তিন সদস্য হলেন-আশরাফুল হাসান, নূর জাহান বেগম ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশেনালের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শ্রম আইন লঙ্ঘন সংক্রান্ত মামলাটি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা দেড় শতাধিক মামলার মধ্যে একটি। নাগরিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত ইস্যুগুলোর জন্য মোহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করা শ্রম আইন এবং বিচার ব্যবস্থার চরম অপব্যবহার ও তার কাজ এবং ভিন্নমতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশোধের একটি রূপ-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমনই বিশ্বাস করে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, আইনের অপব্যবহার এবং প্রতিহিংসা নিষ্পত্তির জন্য বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এখন সময় এসেছে সরকারের ন্যায়বিচারের এই পরিহাস বন্ধ করার।
বিবৃতিতে আরও বলা বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার প্রকাশ্যে মোহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করেছেন। ২০১১ সালে তিনি তার বিরুদ্ধে দরিদ্রদের রক্ত চোষার অভিযোগ করেন এবং ২০২২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করার চেষ্টার’ জন্য তাকে পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দেন। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, অনেক নোবেল বিজয়ী এখন কারাগারে আছেন এবং আইন তার কাজ করবে’- যা ইঙ্গিত দেয় যে ইউনূসকেও কারারুদ্ধ করা যেতে পারে। মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অস্বাভাবিক গতিতে বিচার চলছে তা বাংলাদেশের অন্যান্য শ্রম অধিকার সম্পর্কিত আদালতের মামলার সম্পূর্ণ বিপরীত।
এর মধ্যে ২০২২ সালে বিএম কনটেইনার ডিপো এবং ২০২১ সালে হাশেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে, যেখানে নিয়োগকর্তার অবহেলা ও নিরাপত্তা মান না মানার কারণে প্রায় ১০০ জন শ্রমিক নিহত হন। উভয়ক্ষেত্রেই কোম্পানির মালিকরা কোনো পরিচিত ফৌজদারি দায়বদ্ধতার মুখোমুখি হননি এবং সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে জবাবদিহিতা এড়িয়ে গেছেন।
অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, যারা শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করছে তাদের নিঃসন্দেহে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তবে মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য শ্রম আইন ও ফৌজদারি বিচারের অপব্যবহার না করে কর্তৃপক্ষের উচিত অনিরাপদ কারখানার মতো শ্রম অধিকারের প্রতি ব্যাপক হুমকি মোকাবিলার দিকে মনোনিবেশ করা। যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিকের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
চলতি মাসের ৫ তারিখ বাংলাদেশে মোহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যান্য ভিন্নমতের কণ্ঠকে হয়রানি ও ভয় দেখানোর বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও ওই বিবৃতির শেষে বলা হয়।