বেশ কয়েক মাস ধরে ভারত-কানাডার মধ্যে চলছে শীতল যুদ্ধ। টের পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি শেষ হওয়া জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে এটি প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় কানাডার শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার হত্যার ইস্যুকে নরেন্দ্র মোদির সামনে আনেন জাস্টিন ট্রুডো। তবে মোদির জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী। তাই মোক্ষম জবাব দিতে অটোয়ায় নিযুক্ত ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের প্রধানকে বহিষ্কার করে জাস্টিন ট্রুডো প্রশাসন। পাল্টা জবাবে কানাডার এক কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয় মোদি প্রশাসন।
কানাডা প্রবাসী আলোচিত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর গত জুন মাসে খুন হন। হত্যার তিন মাস পর হঠাৎ সোমবার কানাডা অভিযোগ করে,হরদীপকে হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত রয়েছে। শুধু তাই নয়, অটোয়ায় নিযুক্ত ‘র’ এর কর্মকর্তা পবন কুমারের বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনে ট্রুডো প্রশাসন। জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে সাইড লাইন বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির সাথে বিষয়টি উত্থাপন করেন জাস্টিন ট্রুডো। তবে হত্যার পেছনে ভারত জড়িত নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদি। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সোমবার অটোয়ায় নিযুক্ত ওই গোয়েন্দাপ্রধানকে বহিষ্কার করে কানাডা।
অটোয়ার এই আচমকা সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে যায় নয়াদিল্লি। পাল্টা পদক্ষেপ নিতে দেরি করেনি নরেন্দ্র মোদি প্রশা্সন। মঙ্গলবার কানাডার একজন সিনিয়র কূটনীতিককে ভারত ছেড়ে যেওয়ার নির্দেশ দেয় নয়াদিল্লি।
কেন এই পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিলো ভারত ও কানাডা? বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের কিছু অংশের সমন্বয়ে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন হরদীপ। ভারতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে নয়াদিল্লি। তবে এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। গত ১৮ জুন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের এক শহরতলিতে হরদীপকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
হরদীপের এই খুন হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি কানাডা সরকার। সোমবার হাউজ অব কমন্সে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন,নিজেদের মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিকের হত্যায় বিদেশি কোনো সরকারের সংশ্লিষ্টতা তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
ভারতের পাঞ্চাব অঞ্চলে শিখদের স্বাধীন দেশ খালিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন হরদীপ। শুধু তাই নয়, স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের ইস্যুতে ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের সারেতে চলতি সেপ্টেম্বরে গণভোট আয়োজন করতে চেয়েছিলেন প্রভাবশালী ওই শিখ নেতা। এর আগে, অন্টারিও প্রদেশেও গণভোট আয়োজন করেন তিনি।
হরদীপের এই শিখ রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা ভালভাবে নেয়নি ভারত সরকার। ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ওই শিখ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় অটোয়ার সমালোচনা করে নয়াদিল্লি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডা দীর্ঘসময় ধরে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরুপ ‘খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের’ আশ্রয় দিয়ে আসছে।
পাল্টাপাল্টি কূটণীতিক বহিষ্কার ইস্যুতে ভারত ও কানাডার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। ভারতের সাথে হওয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রতি স্থগিত করেছে কানাডা সরকার। এর পক্ষে দেশটি জানায়, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। তবে নয়াদিল্লি এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এদিকে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করায় দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বেশ উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ভারত ও কানাডার এই যুদাংদেহি উত্তেজনা প্রশমণে এগিয়ে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শিখ নেতা হরদীপ হত্যা ইস্যুতে নয়াদিল্লি ও ভারতের মধ্যকার এই শীতল যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটন কতটুকু সফল হবে তাই এখন দেখার বিষয়।