কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ফিলিপাইনের কালো আখ চাষে সফল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জিন্নুর রহমান। তিনি মাত্র ২৫ শতক জমিতে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ায় ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। জিন্নুর রহমানের বাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী ফকিরটারী এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মমতাজুর রহমানের ছেলে। জিন্নুর রহমান বাড়ীর সামনে পতিত জমিনে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ছাড়াও ২৫ টি সাগর কলা, ২৮ টি পেয়ারা, ১০০ টি উচ্চফলনশীল জাতের সজিনাসহ বিভিন্ন শাক-সবজি আবাদ করেছেন।
তবে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ খুবই সুমিষ্ট ও লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় চাষিরাও এ জাতের আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বাগানের চলাচলের রাস্তার দুই ধারে লাগানো ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ এখন তার বাগানে শোভা পাচ্ছে। আখ লম্বায় বড় হওয়ায় যেন ভেঙে না যায় সে জন্য বাঁশ, সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে আটকে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জিন্নুর রহমান একজন সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি বিষ মুক্ত চাষাবাদ করার চিন্তা মাথায় আসে। বিষ মুক্ত চাষাবাদ করতে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করলে কৃষিবিদ রহমত শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ হয়। পরে ২০২১ সালে ঢাকায় গিয়ে কৃষিবিদ রহমত শহিদুল ইসলামের কাছে এক দিনের প্রশিক্ষন গ্রহন করেন জিন্নুর রহমান। প্রশিক্ষন নেয়ার পর বিষ মুক্ত সবজির পাশাপাশি পরীক্ষা মুলকভাবে ছিনাইদাহ থেকে ২০ টি ফিলিপাইনের কালো আখের চারা সংগ্রহ করে রোপন করেন। প্রথম বছরেই ২০ টি ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ বিক্রি করতে না পারলেও আখের চারা ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং ২৫ শতক জমিতে আখের চাষাবাদ করেন। এখন আখের গাছ গুলো বাইরে কালো খয়েরি হওয়ায় দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। দেশীয় প্রজাতির আখের তুলনায় ফিলিপাইনের আখের গাছগুলো ১২ থেকে ১৫ ফুট লম্বা। দেশীয় আখের চেয়ে কিছু ভিন্নতা ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ। এই আখ খুবই নরম, রসও অনেক বেশি, মিষ্টিও দ্বিগুন এবং চাষবাদেও লাভ বেশি।
এসব কথা ভেবেই অনেক স্বপ্ন ও লাভবান হওয়ার আশায় ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষাবাদ করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জিন্নুর রহমান। এস,পি,কে পদ্ধতিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে ১০ কেজি দেশি গাভীর মল ,১০ কেজি মুত্র, ১ কেজি নালি ও ১ কেজি বেশন মিশ্র করে ৪৮ ঘন্টা পর তা আখ ও সবজি ক্ষেতে দেন।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জিন্নুর রহমান জানান, দেড় মাস পরেই আখ ও আখের চারা বিক্রি করতে পারবো। গত দেড় বছরে তার ওই খামারে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে মাত্র ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। জিন্নুর রহমান আরও বলেন, ১ বিঘা জমিতে পৃথক পাঁচটি কৃষিভিত্তিক আবাদ রয়েছে। পরবর্তীতে তিনি এর পরিধি আরও বাড়াবেন। তার বাগানে প্রতিদিনই ২ জন কৃষি শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি উৎপাদন খরচ মিটিয়ে মাত্র ২৫ শতক জমিতে আখ ও চারা বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
একটি ফিলিপাইনের আখ খেত কম পক্ষে ২০ বছর স্থানীত্ব হয়। ফিলিপাইনের আখ চাষে দ্বিগুণ লাভের আশা তিনি আরও ৫ বিঘা জমিতে আখ চাষাবাদ করবেন বলে জানান এই তরুন কৃষি উদ্যোক্তা।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জিন্নুর রহমানের বড় ভাই সাইদুর রহমান সাজু জানান, আসলে কি বলবো। প্রথমে যখন ২০ টি ফিলিপাইনের কালো জাতের চারা রোপন করে তখন আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যে এই মাটিতে আখ চাষ হবে। কিন্তু প্রথম বছরে যখন আখ চাষে সফল হলেন। তখন স্থানীয়রাসহ আমাদের বাড়ীর সবাই অবাক হলেন এবং ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ খেতে এতো সু-স্বাদ, এতো রস না খাইলে বিশ্বাসেই করতে পারলাম না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ নিলুফা ইয়াছমিন জানান, উপজেলায় প্রথম বারের মতো বিষ মুক্ত ভাবে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখের চাষাবাদ করেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জিন্নুর রহমান। আমরা খবর পেয়ে কৃষি বিভাগের একটি টিম তার আখ খেতটি পরিদর্শন করি। বেলে দোয়াশ মাটি আখ চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলনও হয়েছে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে তরুণ উদ্যোক্তা জিন্নুর রহমানকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। কোন কৃষক যদি ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করেন আমরা কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগী করবো। এ ধরনের চাষাবাদে উদ্যোক্তারা অনেক বেশি লাভবান হন। এ উপজেলায় জিন্নুর রহমানের আখ ক্ষেতসহ মোট ৩ হেক্টর জমিতে আখ চাষাবাদ হয়েছে।