আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

তালাক দেয়ায় এগিয়ে ৯০শতাংশ নারী

তালাক দেয়ায় এগিয়ে ৯০শতাংশ নারী

বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতনের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা।

এমনি একটি উপজেলা টাঙ্গাইলের সখীপুর। এ অঞ্চলে বিবাহবিচ্ছেদ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। গেলো এক বছরে তালাকের মাধ্যমে ৫৭৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরাই দিয়েছেন।

ওই এলাকার একাধিক নারী জানান, সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় কেবল তখনই বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হয়।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফিরোজা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, আগে নারীর ক্ষমতায়ন এখনকার মতো ছিল না। পুরুষদের নির্যাতন-অত্যাচার সহ্য করে নারীরা সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় মর্যাদা বেড়েছে। এ কারণে মেয়েরা আর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চায় না। তারা আর মুখ বুজে থাকে না। এ জন্য হয়তো বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী বলেন, তালাক কমাতে হলে আগে বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হবে। এছাড়া অসময়ে বিয়ে, যৌতুক, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, স্বামীর নির্যাতন তালাকের অন্যতম কারণ।

 এদিকে, সখীপুর উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার এলাকার অন্যতম কাজী শফিউল ইসলাম জানান, উপজেলায় ২০২১ সালে বিয়ে হয়েছে ৮৩৩টি এবং বিচ্ছেদ ৫৭৮টি। এর মধ্যে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ১৭টি, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে ২৯৭টি ও ছেলে-মেয়ে পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে ২৬৪টি বিয়ের তালাক নিবন্ধন করা হয়েছে। উপজেলার ১২টি কাজীর কার্যালয় ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

শফিউল ইসলাম আরও বলেন, ২০২০ সালে উপজেলায় বিয়ে হযেছে ৭৫৭টি। আর বিচ্ছেদ ৪৭৬টি। বাল্যবিবাহ, স্বামী বিদেশে থাকা ও পরকীয়া নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় প্রথমে দুই পরিবারের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে। গেলো বছর উপজেলার ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরা দিয়েছেন।

সখীপুরের আটটি ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভাসহ মোট ১২টি কাজী অফিস রয়েছে। কাজী অফিসের নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নে ৬৩টি, বহেড়াতৈল ইউনিয়নে ৬৯টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ২৮টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ৪৪টি, হাতীবান্ধা ইউনিয়নে ৪৪টি, কালিয়া ইউনিয়নে ১২০টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ৩৫টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ২১টি ও পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ১৫৪টি বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) নিবন্ধন করা হয়েছে।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন তালাক | দেয়ায় | এগিয়ে | ৯০শতাংশ | নারী