আর্কাইভ থেকে আন্তর্জাতিক

হাসপাতালে জ্বালানির অভাবে রোগীদের মৃত্যু

হাসপাতালে জ্বালানির অভাবে রোগীদের মৃত্যু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার কয়েকটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জ্বালানির অভাবে গাজার প্রায় সব হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অন্যতম আল শিফা হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে। জ্বালানির অভাবে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। এর ফলে হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সেবা না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও চার জনের। মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৩৭ শিশুসহ গুরুতর আহত অনেক রোগী। রোববার (১২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, আল শিফা হাসপাতাল ঘিরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে শত শত রোগী ছাড়াও হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সেখানকার শেষ জেনারেটার বন্ধ হয়ে যায় যখন সেটির জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। হাসপাতালের মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া বলেন যে, এই স্থাপনাটি শনিবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তিনি টেলিফোনে জানান, চিকিৎসার যন্ত্রপাতিগুলো সব বন্ধ হয়ে যায়। রোগীরা, বিশেষত যারা নিবিড় চিকিৎসাকেন্দ্রে ছিলেন তাদের জীবন শেষ হয়ে যায়। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখনও ছেন থেকে বন্দুকের গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এ দিকে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা হাসপাতালের নীচে সুড়ঙ্গে অস্ত্র শস্ত্র লুকিয়ে রাখার এবং আল শিফা ও অন্যান্য হাসপাতালের নীচে তাদের কমান্ড সেন্টার স্থাপন করার অভিযোগ করে। আর এই কারণেই ওই ভবনগুলিকে সামরিক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু করা বৈধ ব্যাপার। তবে হামাস এবং হাসপাতালের কর্মীরা ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ৩৫ দিনের বেশি সময় ধরে অকাতরে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে দখলদার ইসরায়েল। এমন অবস্থার মধ্যে মুসলিম ও আরব বিশ্বের নেতারা সৌদি আরবে একত্রিত হয়েছিলেন। তবে সম্মেলনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখনও তারা দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। গেলো ৩৫ দিনে ভয়াবহ হামলায় সাড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি শিশু এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারী। নিহতদের মধ্যে প্রায় সবাই বেসামরিক এবং সাধারণ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল যে হামাসকে নির্মূলে এই নৃসংস অভিযান পরিচালনা করছে, সেই হামাসের টিকিটিও খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এর ফলে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অন্যতম মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, শিশু হত্যা, সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা, মানবিক সংকট সৃষ্টিসহ ভয়াবহ সব অভিযোগ এনেছে। তারা শিগগিরই গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জানিয়েছে যে, তারা সব প্রকারভাবে ইসরায়েলের পাশে আছে এবং গাজায় তারা স্থায়ী বা দীর্ঘ সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি চায় না। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে গড়ে ওঠা ইসরায়েল গাজায় যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, সেটি বিশ্বের যেকোনো ভয়ঙ্কর ও নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গেছে। হাজার হাজার শিশুকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আহত। লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি ঘর সব হারিয়েছে। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ গাজায় থাকা ২৩ লাখ মানুষের জন্য যে গুটিকয়েক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেটিও জ্বালানির অভাবে ও সরাসরি হামলার শিকার হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আল শিফা হাসপাতালের ইনকিউবেটরে প্রায় ৩৯ শিশু রয়েছে। জ্বালানির কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই শিশু এরই মধ্যে মারা গেছে। বাকি ৩৭ শিশু দুধের বিকল্পের অভাবে পানিশূন্যতায় ভুগছে। এমনকি তারাও মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। এটি শুধু আল শিফা হাসপাতালের চিত্র নয়, গাজাজুড়েই এমন অবস্থা। প্রতিদিন মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে যে পরিমাণ সহায়তা গাজায় ঢুকছে, সেটি চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন হাসপাতালে | জ্বালানির | অভাবে | রোগীদের | মৃত্যু