বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের প্রতি পাঁচটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় ভয়েস অব সাউথ সামিটে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভারতের আয়োজনে ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ-২০২৩’ শীর্ষক এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার কথা উল্লেখ করে সংঘাত বন্ধে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এক বিশ্ব হিসেবে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সংঘাত বন্ধের দাবি জানানোর এখনই সময়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বাসের ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবে ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। এসব সংঘাত জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধরত দেশ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের আস্থা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা তৈরির আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, নির্মম গণহত্যার মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক ও অমানবিক অস্তিত্বে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পৃথিবী অসহনীয় দারিদ্র্য, অবাঞ্ছিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বনাশা হুমকিতে জর্জরিত। এছাড়াও এখন গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং দুর্ভোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা।
তিনি বলেন, এই সংকটময় সময়ে বিশ্বকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রত্যেকের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে হবে।
দ্বিতীয় ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ-২০২৩’ শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধির জন্য সবার আস্থা নিয়ে ঐক্য’ প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব আজ ‘বিশ্বাসের ঘাটতি’ নামক যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি সে সময় এ প্রতিপাদ্য সময়োপযোগী।
পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষের একজন দৃঢ় সমর্থক হিসেবে বিশ্বাস করি মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্য বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল সাউথকে অবশ্যই একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট হিসেবে থাকতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হিসেবে নারীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রাণবন্ত সমাজ গঠন গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্বপালনকারী নারীনেত্রী হিসেবে আমি নিশ্চিতভাবে জানি একটি উজ্জ্বল এবং ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন একটি কৌশলগত প্রয়োজন।
তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু প্রসঙ্গে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা অত্যাবশ্যক। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি বিনিময় অপরিহার্য।
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলো গ্লোবাল সাউথে, এ হিসেবে সবার জন্য উন্নত জীবন, জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ এবং আমদানিকারক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে গ্লোবাল সাউথের উচিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অভিভাসনকে সুবিন্যস্ত করা।
পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত এবং কোভিড-১৯ এর কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকালে এবং উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে একটা ভালো সময় ধরে এসব দেশকে পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানাই।
এএম/