আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

১০ দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত, ধান ঘরে তুলতে বিড়ম্ভনায় কৃষক

১০ দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত, ধান ঘরে তুলতে বিড়ম্ভনায় কৃষক

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে গেলো ১০ দিন ধরে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাতে বোরো ধান কাঁটা, মাড়াই, সিদ্ধ করতে চরম বিরম্ভনায় পড়েছেন কৃষকরা। এ জেলার প্রায় লক্ষাধিক কৃষক খেতের পাকা ধান-কাঁটা ,মাড়াই ও শুকানোর বাঁধায় হয়ে দ্বাড়ায় আকাশে কালো মেঘ ও বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে কৃষকদের পাঁকা ধান কাটা ও মাড়াই ব্যাহত হচ্ছে। টানা দশ দিন ধরে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় রোদের দেখাও মেলেনি।

আজ শনিবার (২১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যেও জেলার বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে দেখা গেছে, আকাশে একটু রোদ দেখলে মনের আনন্দে ধান কাঁটা, মাড়াই ও শুকাতে বাড়ীর উঠান ও সড়কে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষক-কৃষানি।

বৃষ্টিপাতে হাজার হাজার পাঁকা ধান ক্ষেতে হাঁটু থেকে কমোর পানিতে তলিয়ে গেলেও চরম বিরম্ভনা ও উচ্চ মূল্য নিয়ে খেতের ধান কাঁটছেন চাষিরা। শুধু ধান নয় পাটসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল ডুবে যাওয়ার আশংকা করছেন প্রান্তিক চাষিরা। এ দিকে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ বড় ধরণের বন্যার আশংকা করছেন। সেই সাথে দুপুর পর্যন্ত বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ধান কাঁটা, মাড়াই ও শুকানোর বিরম্ভনায় পড়েছে কৃষকরা। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, গত  ১০ থেকে ১২ দিন এউপজেলায় টানা বৃষ্টিপাতে হাজার হাজার কৃষকের পাঁকা ধান খেতে হাঁটু ও কোমর পানি হওয়ায় ধান ঘরে তোলা দিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

এ দিকে ধান কাঁটা শুরুর দিয়ে কৃষি শ্রমিকরা বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা নিলেও এখন নিচ্ছেন ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। ধানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চরম দুচিন্তায় ভুগছেন প্রান্তিক চাষিরা।  

ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক শৈলান চন্দ্র জানান, এ বছর দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। গত বছর ধান কাঁটা শ্রমিক বিঘা প্রতি ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা ছিল। এ বছর বিঘা প্রতি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সেচ ভাড়াও দিতে হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলে এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। এবার ফলন কম হওয়ায় এক বিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২০ মন ধান হওয়ার সম্ভাবনা রছেছে। ধানের দাম না বাড়লে লোকসান ঘুনতে হবে বলে জানান তিনি। খেতের ধান ঘরে তুললেও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ধান শুকাতে পারিনি। এমন পরিস্থিতি বেশিদিন থাকলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি আশংকা করছেন। 

নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক জালাল উদ্দিন ও বিমল চন্দ্র সিংহ বলেন, অর্ধেক ধান কাঁটা হয়েছে। এখনও খেতে ধান আছে। প্রতি বিঘায় ৫ হাজার টাকা দরে শ্রমিক ধান কেটে দিচ্ছেন। টানাবৃষ্টিপাতের ফলে আমরা এখন ধান মাড়াই করতে পারিনি। এক ঝলক রোদ দেখা গেলেই আমরা ধান মাড়াই ও শুকাতে দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ ভাবে গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছেই। তাই ধান মাড়াই ও শুকানো আমরা চরম দুচিন্তায় আছি বাহে !

ভুরুঙ্গামারী উপজেলার কৃষক বাবু মিয়া  জানান, খেতের ধান কাটলেও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে এখনো ধান শুকাতে পারিনি। এরকম বৃষ্টিপাত থাকলে ধান পঁচে যাবে বলে তিনি আশংকা করছেন।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া ও  কৃষি পর্যবেক্ষণাগাড়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর মিয়া বলেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে কখনো মাঝারী কখনো ভারী বৃষ্টিপাতের দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, ১৩ মে থেকে  শনিবার ২১ মে সকাল পর্যন্ত ৪২০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা আগামী দুই থেকে তিনদিন মাঝারিসহ ভারী  বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। 

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশিদ বলেন, গেলো বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এ বছর এ জেলা ১ লাখ ১৬ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করেছে। এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে বলে দাবী করেন। টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধান মাড়াই ও শুকানো নিয়ে কৃষকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। 

মেঘ হাসান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ১০ | দিন | ধরে | ভারী | বৃষ্টিপাত | ধান | ঘরে | তুলতে | বিড়ম্ভনায় | কৃষক