বাংলাভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হবে কিনা তা নির্ভর করছে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর-এমনটাই জানালেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষা-আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্প্যানিশ। ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। এই বিবেচনায় বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করে নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ সরকারও সেই দাবির বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়েও বিষয়টি ওঠান লাবলু হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাংলাদেশি সাংবাদিক। তার প্রশ্ন ছিল-আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে আমার দুটি প্রশ্ন আছে। প্রথমত, বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষাভাষী ভাষা হিসেবে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি বা অনুরোধ রয়েছে। আর আমরা সবাই জানি যে, মাতৃভাষার অধিকারের জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের দিনে জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। সে অনুরোধের বিষয়ে মহাসচিবের মতামত সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন?
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘মাতৃভাষা দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ঘিরে আমাদের বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার সাথে সপ্তম ভাষা হিসেবে বাংলাকে যোগ করার ব্যাপারটি একান্তভাবেই সাধারণ অধিবেশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
জাতিসংঘের সদর দফতর প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে জানতে চান। তার প্রশ্নটি ছিল, ‘মাতৃভাষা রক্ষার তাগিদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে জাতিসংঘের সদর দফতর প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোনও সম্ভাবনা আছে কি? শহীদ মিনার বলতে এক ধরনের কাঠামো বোঝায়, যা শৈল্পিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক কারণে আত্মত্যাগকারী লোকদের স্মরণে নির্মিত।’
জবাবে মহাসচিবের মুখপাত্র ডুজারিক জানান, ‘যেকোনও ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জাতিসংঘে একটি প্রক্রিয়া রয়েছে, যেটি শুরু হতে হয় সদস্য রাষ্ট্রের স্থায়ী মিশন থেকে। জাতিসংঘ সদর দফতর প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার অথবা যেকোনও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আহ্বান আসতে হবে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী মিশন থেকে। এরপরই সাধারণ পরিষদ তা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাববে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মিশনকে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে হবে।’
তবে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষায় পরিণত করার আহ্বানটি অনেক আগেই বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। তৎকালীন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন ওই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তবে আর্থিক অজুহাতে সেই রেজ্যুলেশনটি পাস হতে পারেনি বলে সে সময় জানানো হয়েছিল।