পরামর্শ

নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু উপায়

নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু উপায়
কথায় আছে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা থেকে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করা সোজা। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে ‘নিজেকে কেন নিয়ন্ত্রণ করব?’ আসলে জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে যদি আমাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ বা সেলফ কন্ট্রোল থাকে। সেলফ কন্ট্রোল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল। সেলফ কন্ট্রোল বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন মনে হলেও কিছু জিনিস ফলো করলে এই অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব। সেলফ কন্ট্রোল বাড়ানোর উপায় জীবনে অনেক সময় আমাদের নিজেদের আবেগ ও ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অনেকে মনে করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করব কিন্তু সময় আসলে সে নিজেকে দেয়া কথা রাখতে না পেরে রাগ করে ফেলে এবং এতে বন্ধুত্বও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না বলেই হেলদি লাইফস্টাইলে যেতে পারি না। এক কথায় আত্মনিয়ন্ত্রণ বা সেলফ কন্ট্রোল মানে হচ্ছে নিজের ইমোশন, বিহেভিয়ারে ও লাইফস্টাইলের কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা। ১. মনকে শান্ত রাখা যাদের মধ্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কম তাদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার প্রবণতা থাকে। সঠিকভাবে কখন কী করা উচিত তা না ভেবেই যেকোনো একটি কাজ করে ফেলে। তাই নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে এবং ধৈর্য বাড়াতে হবে। তার জন্য ইয়োগা করা যেতে পারে। ইয়োগা মনের অস্থিরতা কমিয়ে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়৷ মনকে শান্ত রাখার জন্য গান শোনা যেতে পারে, গান উদ্বেগ কমিয়ে দেয়। মনকে কোনো একটি কাজে স্থির রাখতে অসুবিধা হলে উল্টা সংখ্যা গুনতে পারেন যেমন ১০০, ৯৯, ৯৮, ৯৭, এতে মন কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হয়। ২. একটি লক্ষ্য স্থির করা নিজেকে সব কাজ ও অভ্যাস থেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন না, এতে করে কোনো কাজ সঠিকভাবে হবে না। যেমন আপনি ভাবলেন আজকে থেকে ওজন কমানো শুরু করবেন, পাশাপাশি বই পড়ার অভ্যাস করবেন এবং সবসময় হাসিখুশি থাকবেন। অনেক গুলো অভ্যাস নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করলে আপনার মন বিচলিত হয়ে পরবে। তাই যেকোনো নিদিষ্ট একটি কাজ ঠিক করুন এবং নিজেকে কিছুদিন সময় দিন ও যে অভ্যাস পরিবর্তন করতে চান তার উপর চর্চা করুন। ঠিক এইভাবে একটি করে আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন। ৩. ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনেক বড় লক্ষ্য স্থির না করে ছোট ছোট স্টেপস ফেলুন। আমি এক মাস টানা ব্যায়াম করব না ভেবে, নিজেকে বলুন আমি এক সপ্তাহ ব্যায়াম করব। অনেক বড় বড় লক্ষ্য স্থির করলে তা আমাদের কাছে চাপ মনে হয়। এরপর কিছুদিন করার পর আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই ও সে কাজটি করা পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেই। তাই ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন। ৪. নিজেকে পুরস্কৃত করা কোনো কাজ করতে যদি সফল হন তবে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। নিজেকে বলুন ‘আমি যদি ১৫ দিন হেলদি খাবার খেতে পারি, তাহলে ১৫ দিন পর আমি আমার পছন্দের পাস্তা খাব।’ এতে করে আপনার সে কাজের প্রতি উৎসাহ অনেক বেড়ে যাবে। নিজের মধ্যে কোনো সাময়িক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও এপ্রিশিয়েট করুন। ৫. কেন শুরু করেছিলেন সেটা ভাবা কোনো অভ্যাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করা যখন শুরু করেন তখন মাঝপথে এসে মনে হতে পারে ‘বাদ দেই এ সব করে কি লাভ?’ তখন সাথে সাথে মনে করবেন কেন আপনি কাজটা শুরু করেছিলেন ও এর ফলাফল কী হতে পারে। যেকোনো ভালো অভ্যাসের ফলাফল সাধারণত ভালোই হয়। সে ভালো কথা চিন্তা করে আপনার মন আবার উৎসাহ ফিরে পাবে। চাইলে ফোনের নোটে কিংবা ডায়েরিতে আপনার কাজের উদ্দেশ্য ও ফলাফল লিখে রাখতে পারেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নোটটি পড়ুন। ৬. প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা দিনের কিছুটা সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ সহ যাবতীয় প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। আমরা অনেকে জানি না যে প্রযুক্তি আমাদের উদ্বেগ ও অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়। তখন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পরে। তাই সময় কাটানোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার না করে বই পড়ুন কিংবা নতুন কিছু রান্না করার চেষ্টা করতে পারেন। দিনের মধ্যে আপনি যতটা সময় প্রোডাক্টিভ থাকতে পারবেন ঠিক ততটাই আপনার সেলফ কন্ট্রোল স্কিল বাড়বে। ৭. নিজেকে দোষারোপ না করা কোনো কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে নিজেকে দোষী মনে করা যাবে না। আমাকে দিয়ে কিছু হচ্ছে না, আমি পারব না – এমন ধরণের চিন্তা আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে কমিয়ে দেয়। তাই একবার না পারলে আবার চেষ্টা করতে হবে। এই বার বার চেষ্টা করা আপনার মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসবে। ৮. খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা ও ব্যায়াম করা আমাদের জীবনে খাদ্যের অনেক প্রভাব রয়েছে তাই আমাদের সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা অনেকেই ক্লান্ত অনুভব করলে চা, কফি পান করে থাকি এটি আমাদের সাময়িকভাবে ফ্রেশ অনুভূতি দিলেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ক্যাফেইন জাতীয় খাবার আমাদের অ্যাংজাইটির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই দিনে অতিরিক্ত ক্যাফেইন নেয়া যাবে না। প্রতিদিন ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে এতে আমাদের শরীরে ডোপামিন রিলিজ হয় ও আমাদের মন ভালো থাকবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেলফ কন্ট্রোল বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে মাথা ঠান্ডা রাখাটা জরুরি। কেননা অতিরিক্ত রাগের ফলে ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি নিজেরই হয়। তাই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য, নিজের লাইফস্টাইলকে সুন্দর রাখার জন্য সেলফ কন্ট্রোল প্র্যাকটিস করুন। জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নিজেকে | নিয়ন্ত্রণে | রাখার | কিছু | উপায়