আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘দুর্গোৎসব’। আজ শনিবার (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী। কল্পারম্ভে ঘট স্থাপন, অকালবোধন, অধিবাস শেষে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেবীকে। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে শুরু হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।

হিন্দু পুরান মতে, দেবী দুর্গা, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এজন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয় হয়। আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গা পুজোর উৎসব পালিত হয়।

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তাঁর সন্তান- সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিককে নিয়ে মর্তে অবতরণ করেন। মহাষষ্ঠীর প্রাক্কালে দুর্গার বোধনের পর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। এদিনই দেবীর অকাল বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয়। 

মহাষষ্ঠীর সকাল থেকে চণ্ডীপাঠে মুখরিত সব মণ্ডপ এলাকা। আগামীকাল রোববার মহাসপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা এবং ৪ অক্টোবর মহানবমী শেষে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব।

এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। আর উমা কৈলাসে ফিরবেন নৌকায় যার অর্থ শস্য ও জল বৃদ্ধি। 

এদিকে ধূপ-সিঁদুরের ঘ্রাণ আর কাঁসা- শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারিবাজার। চলছে পূজার শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। আলতা, চুড়ি, টিপ কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

উৎসবের আমেজ শাঁখারিবাজারে বেশ কয়েক দিন আগেই লেগেছে। আজ থেকে ভিড় আরও বাড়বে। আগামী কয়েক দিনের বাড়তি চাপ সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দোকানদাররা। শাড়ি, মুকুট, অলংকার, চন্দন, প্রদীপ, ফুল, সিঁদুর, আলতা, কুমকুম, টিপ, শাঁখা, পলা, আবির, রঙিন কাগজের পাশাপাশি অর্ঘ্য দেয়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী মিলছে শাঁখারিবাজারের বিভিন্ন দোকানে। সাদা পলা আর গোল লাল টিপ চলছে বেশি।

এ বছর সারাদেশের ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। গত বছর সারাদেশের পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ছয়টি বেশি।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যা বসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বেচ্ছাসেবক দল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত এ মন্দিরের মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র ও মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিজয়া শোভাযাত্রা করা হবে।

এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও সুসংহত হোক- এ কামনা করে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৬টায়। পর দিন সোমবার মহা অষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৯টায় এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং সমাপন হবে বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। পর দিন বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় দশমী পূজা শুরু হবে। ওই দিন পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।

হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মহাষষ্ঠী | দিয়ে | শুরু | হলো | শারদীয় | দুর্গোৎসব