বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ে চলছে ভোটগ্রহণ। চার বছরের জেন্য দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার লড়াইয়ে দলীয় মনোনয়নে নেমেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, কমলা হ্যারিস, জিল স্টেইন, চেইজ অলিভার ও নির্দলীয় প্রার্থী কর্নেল ওয়েস্ট। ভোটের আগেই একাধিক জরিপ বলছে, তুমুল লড়াইয়ে সমানতালে এগিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০২০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। এবারের নির্বাচনেও বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তবে দলের নীতি নির্ধারকদের বেশিরভাগই আপত্তি জানালে কমলার ভাগ্য খুলে যায়।
এবারের নির্বাচনে কমলার ইতিহাস সৃষ্টি করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জয়ী হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথবারের মতো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পাবেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ পদে প্রথম বারের মতো আসীন হবেন প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ও এশিয়া বংশোদ্ভূত কোনো ব্যক্তি। এর আগে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তবে ট্রাম্পের কাছে হেরে যান।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এবারের নির্বাচন শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়; বরং এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই নির্বাচনেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষৎ নির্ধারিত হবে। ভোটে জয়ী হলে প্রথম অপরাধমূলক দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফিরে এসে ইতিহাস রচনা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর পরাজয় তাকে এনে দিতে পারে অন্ধকার কারাগার। কারণ বেশ কয়েকটি মামলায় ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও রায় এখনও ঘোষণা হয়নি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থার জরিপ বললেও ভোটের ফল প্রকাশের আগে বলা যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে কে বসতে চলেছেন। চার বছরের জন্য হোইয়াই হাউসে বসবাসের সার্টিফিকেট পাচ্ছেন কে? ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস? তবে পরিস্থিতি যদি এমন হয়, ট্রাম্প বা হ্যারিস কেউই পেলেন না সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তখন কীভাবে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেশি হলেও কমলা হ্যারিসের সমর্থকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাই এবারের নির্বাচনের ফলাফল ‘টাই’ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না অনেকে। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনও নজির না থাকলেও ২০০ বছর আগে ১৮০০ সালের নির্বাচনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মার্কিন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তাহলে প্রেসিডেন্ট বাছাই করবে মার্কিন কংগ্রেস। জনপ্রতিনিধিরাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করবে সিনেট।
১৮০০ সালের ওই নির্বাচনে থমাস জেফারসন ও জন অ্যাডামসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। তবে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জয়-পরাজয় নির্ধারণে এগিয়ে আসতে হয়েছিল মার্কিন কংগ্রেসকে। শেষ পর্যন্ত জেফারসনকে বেছে নেয় মার্কিন কংগ্রেস। ওই সময় কোনো আলাদা নিয়ম ছিল না। পরে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জেরে নতুন নীতি তৈরি করা হয়।
এবারের নির্বাচনে এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হলে নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বাছাই হবে আসছে নতুন বছরের ৬ জানুয়ারি। আর মার্কিন কংগ্রেসই সিদ্ধান্ত নেবে কে পরবেন জয়ের মালা।
এমআর//