গেলো ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শোচনীয়ভাবে হেরেছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই জয়কে কেন্দ্র করে হাজারো মার্কিন নারীর মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের দাবি, ট্রাম্পকে জিতিয়েছেন পুরুষরা। একারণে নারীদের একাংশ পুরুষদের বিরুদ্ধে শুরু করছেন অভিনব ফোর-বি আন্দোলন।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একাধিক জরিপের ফলও বলেছিলো-কমলা হ্যারিসই হতে চলেছেন ৪৭তম প্রেসিডেন্ট। আর ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সম্ভাবনা জাগায় মার্কিন নারীদের বেশিরভাগই আশান্বিত হয়েছিলেন। তবে কমলার পরাজয়ে তারা নিজেদের ভবিষৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছেন। তাই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আবারও জেগে উঠছে ফোর-বি আন্দোলন।
ফোর-বি হলো ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হওয়া নারীদের একটি আন্দোলনের নাম। ফোর ‘বি’তে লুকিয়ে আছে মোট চারটি কোরিয়ান শব্দ ‘বিহন’ ‘বিচুলসান’ ‘বিইয়েওনায়’ও ‘বিসেকসেউ’। শব্দগেুলোর প্রতিটি ‘বি’ দিয়ে শুরু এবং ধারাবাহিকভাবে এর অর্থ হলো-বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে নয়, সন্তানের জন্মদান নয়, প্রেমিকের সঙ্গে কোনো ডেটিং নয় এবং বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক নয়।
সিএনএনের এক বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পের প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৪৬ ভাগ। অপর দিকে কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৫৪ ভাগ। আবার, ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। কমলা সেখানে পেয়েছেন ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষের সমর্থন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিন তরুণীরা বলছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের নিয়ে হতাশ। কারণ, এই তরুণেরা এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, যিনি তাঁদের শরীরের অধিকারে বিশ্বাস করেন না।
এ পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছেন ট্রাম্পেরই কয়েকজন সমর্থক। তাদের একজন নিক ফিউয়েন্টেস এক্সে পোস্টে লিখেছেন, ‘ইয়োর বডি, মাই চয়েস।’ মানে ‘তোমার শরীর, আমার পছন্দ।’ নারীবাদীরা সাধারণত নিজেদের অধিকার রক্ষা প্রসঙ্গে ‘মাই বডি, মাই চয়েস’ স্লোগান দিয়ে থাকেন।
মার্কিন নারীদের একাংশের দাবি, এবারের নির্বাচনের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের মতামত কোনো গুরুত্বই পায় না। এক্স হ্যান্ডলে এক আন্দোলনকারীর দাবি, ‘নিজেদের শরীরটা পুরুষকে দেওয়াটা আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা এটায় রাজি হব না।’ আন্দোলনকারীদের মতে, পুরুষদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব নারীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এর বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার।
যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফোর বি’ আন্দোলনে সমর্থন জানাতে শুরু করছেন। এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘বিয়ে নয়, সন্তান জন্ম নয়, পুরুষদের সঙ্গে ডেটিং নয়, আর কোনো যৌন সম্পর্ক নয়! যুক্তরাষ্ট্রের জন্মহার কমিয়ে দিতে হবে এবং আমরা পুরুষদের বিজয়ের হাসি হাসতে দিতে পারি না। আমাদের মরণ কামড় দিতে হবে!’ এই পোস্টটি মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ২ কোটি ভিউ এবং প্রায় ৫ লাখ রিঅ্যাকশন পেয়েছে। টিকটকেও একই ধরনের প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে নারীরা একে একে পুরুষদের বয়কট করার পক্ষে সাফ কথা বলছেন।
যদিও এই আন্দোলনের বিরোধিতায় আবার শামিল হয়েছেন নারীদেরই একাংশ। এক নেটিজেন মার্কিন নারী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন ‘একজন পুরুষও আপনাদের সঙ্গে শুতে না পেরে নিজেদের ঘুম বিসর্জন দেবেন না। একজনও নয়।’’ একে নেহাতই সোশাল মিডিয়ার ট্রেন্ড বলে দাবি করছেন তারা।
এমআর//