জাতীয়

আজ জাতীয় শহীদ সেনা দিবস

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় শহীদ সেনা দিবস। পিলখানা ট্র্যাজিডির ১৬ বছর । দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারী বেসরকারীভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এরবিপথগামী সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়ার নামেতাদের সদর দফতর পিলখানায় অগ্নিসংযোগলুটপাট ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। ওই দুদিনে বাহিনীর তখনকার মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। 

ঘটনার দিন বিডিআর এর বার্ষিক দরবার চলছিল। দরবার চলাকালে হঠাৎ অস্ত্রসহ দুইজন সিপাহী দরবার হলে প্রবেশ করে। তারা বক্তব্যরত তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করে। এসময় উপস্থিত অফিসাররা তাকে নিবৃত্ত করতে গেলে একজন সিপাহী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ওই সিপাহীর সাথে থাকা অন্যজন সশস্ত্র অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময়ে দরবারে উপস্থিত জওয়ানরা দরবার হল ত্যাগ করে। অন্যদিকে হলের চারদিক থেকে সশস্ত্র অবস্থায় অনেক বিডিআর সদস্য গুলি করতে করতে দরবার হলে প্রবেশ করে।

পিলখানার এ নির্মম ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য বিডিআর সেক্টরেও অবশেষে ৩৩ ঘন্টা পর সেনা অভিযানের মধ্য দিয়ে পিছু হটে বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা। অবসান ঘটে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের।

২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ভেতরে সন্ধান মেলে একাধিক গণকবরের। সেখানে পাওয়া যায় তখনকার বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদতার স্ত্রীসহ সেনা কর্মকর্তাদের মরদেহ। উদ্ধার করা হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র।

নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিচার করে অনেককেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এছাড়াও আরও  ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

পরে গত বছর হাইকোর্ট ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।  ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি। নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যে আপিল করেছিলতাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এছাড়া চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনকে খালাসের রায় বহাল রাখা হয়।

এছাড়া মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে আরও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন জজ আদালত। তাদের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ডআটজনকে সাত বছরের কারাদণ্ডচারজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২৯ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট।

বিভাগীয় মামলায় চাকরিচ্যুতসহ সাজা দেওয়া হয় আরও অনেককে। ২০০৯ সালের নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের পর পুরো বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। পরে বাহিনীর নাম ও পোশাক এবং আইন পরিবর্তন করে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন করে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি ওঠে। এর প্রেক্ষিতে বিডিআর এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জাতীয় শহীদ সেনা দিবস