আইন-বিচার

ভুয়া অভিযোগে হয়রানি ঠেকাতে আসছে আইনি পরিবর্তন: আইন উপদেষ্টা

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া ও ভিত্তিহীন তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে আসামি করার প্রবণতা বন্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) সংশোধন করে নতুন বিধান যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, “সংশোধনের ফলে যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত না হয়, তাহলে বিচার শুরু হওয়ার আগেই আদালত সেই ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। এতে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।”

রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “অনেক সময় মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হওয়ায় নির্দোষ মানুষ বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হন। এসব মামলার পেছনে ব্যবসা ও প্রতিশোধের মনোভাব কাজ করে।”

তিনি আরও জানান, নতুন বিধানে স্পষ্ট করা হয়েছে—যদি কোনো মামলার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ কমিশনার বা পুলিশ সুপার মনে করেন যে অভিযোগটি ভিত্তিহীন, তবে তারা সেই রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেবেন। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন, অধিকাংশ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তাহলে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত ও পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে ভুয়া মামলা ও মামলা বাণিজ্য রোধে সক্ষম হবে। যদিও তদন্ত থেমে থাকবে না, তদন্ত শেষ হলে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের নাম তদন্ত রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা হত্যা মামলা যখন দায়ের করা হয় সেটা তদন্তে দুই-চার বছর লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একধরনের মামলা বাণিজ্য থাকে। এখানে যারা আসামি হন তারা কয়েকবছর ধরে একটা আশঙ্কার মধ্যে থাকেন যে, কখন গ্রেপ্তার হবে বা মামলা বাণিজ্য হয় কিনা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা একটা নতুন বিধান করেছি।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই নতুন বিধানে বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনও মামলার বিষয়ে উনার যদি মনে হয় করা যৌক্তিক, তাহলে উনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলতে পারেন যে মামলার তদন্তের বিষয়ে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে। সেই প্রাথমিক রিপোর্ট যখন তদন্ত কর্মকর্তা জমা দেবেন তখন পুলিশ কমিশনার কিংবা পুলিশ সুপার তাকে বলবেন যে, এই প্রাথমিক রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে। জমা দেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যদি মনে হয় মামলার মধ্যে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে তার মধ্যে ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগই আসলে নেই, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল স্টেজেই ওই মামলা থেকে আসামিদের মুক্ত করে দিতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে যেসব মামলায় গ্রেফতার বাণিজ্য বা মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, অসংখ্য লোককে আসামি করা হচ্ছে, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের আদালত বিচার শুরু করার আগে মুক্তি দিতে পারবে। এর ফলে ভুয়া মামলা থেকে আশা করি, রেহাই পাওয়া যাবে। তার মানে এই না যে তদন্ত থেমে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত শেষ হওয়ার স্টেজে পুলিশ যদি দেখে যাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে আসলেই পরবর্তী সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে, পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার সময় সেসব ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে জমা দিতে পারবে।’

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #আইন উপদেষ্টা #ফৌজদারি কার্যবিধি