হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলা বহুদিন ধরেই বালু-পাথরের জন্য পরিচিত। এতদিন এসব নির্মাণসামগ্রী মূলত ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হতো। তবে সম্প্রতি পঞ্চগড় রেলস্টেশন থেকে মালবাহী ট্রেনে বালু পরিবহন শুরু হওয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। পরিবহন খরচও কমছে। কিন্তু শুরুতেই দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে এই উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্রাকে করে ১০–১৫ হাজার টাকার বালু ঢাকা বা আশপাশের জেলাগুলোতে পাঠাতে খরচ হয় ৪০–৪৫ হাজার টাকা। অনেক সময় ট্রাকের সংকট দেখা দেয়, ফলে ভোগান্তিও বাড়ে। কিন্তু ট্রেনে একই পরিমাণ বালু পরিবহনে খরচ হয় ৩০–৩৫ হাজার টাকা। যমুনা সেতু হয়ে ট্রেনে সরাসরি ঢাকায় বালু পাঠানো গেলে খরচ আরও ২০–২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
মালবাহী ট্রেনের প্রতিটি ওয়াগনের ধারণক্ষমতা ৫৫ মেট্রিক টন। বর্তমানে দুটি ট্রেন (ঢাকনাওয়ালা ও খোলা) ব্যবহার হচ্ছে, প্রতিটিতে ৩০টি ওয়াগন থাকে। শ্রমিকরা ওয়াগনে ভেজা বা শুকনো বালু নির্দিষ্ট দাগ পর্যন্ত লোড দেন।
ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অভিযোগ, স্টেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় প্রতিটি বগিতে নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত ৩০–৩৫ মেট্রিক টন বালু তোলা হচ্ছে। এতে একদিকে ট্রেনগুলো যান্ত্রিক ঝুঁকিতে পড়ছে, অন্যদিকে প্রতি ট্রেনে সরকার হারাচ্ছে ৮–১০ লাখ টাকা রাজস্ব।
এমনকি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি ট্রেনের বিপরীতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে স্টেশনের ভেতরেই খোলামেলা আলোচনা চলছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবি হাসান বলেন, ‘ট্রেনে বালু পরিবহন শুরু হওয়ায় আমরা সবাই আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু এখনই যদি দুর্নীতি শুরু হয়, ভবিষ্যতে পরিবহন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে, তেমনি আমাদেরও বড় ক্ষতি হবে।’
অন্যদিকে শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, ট্রেনভিত্তিক পরিবহন চালু হওয়ায় কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে অনিয়মের কারণে এ উদ্যোগ ব্যাহত হলে অনেকেই কাজ হারাবেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চগড় রেলস্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ইনচার্জ জাহেদুল ইসলাম ও জুনিয়র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোশারফ হোসেন। তারা দাবি করেন, ‘মালবাহী ট্রেনে অতিরিক্ত বালু লোড করা হয় না। কিছু ব্যবসায়ী অবৈধ সুবিধা নিতে গুজব ছড়াচ্ছে।’
একইভাবে এস এস ট্রেডার্স নামের একটি বালু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানও জানিয়েছেন, তারা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বালু পরিবহন করছেন, কোনো প্রকার ঘুষ দেওয়া হয় না।
প্রধান রেল পরীক্ষক আনোয়ার সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এমএ//