প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়ের করা মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাবাগ থানার ওসি (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার এই রিমান্ড আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতে শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার সদস্য কনস্টেবল বাবুল হোসেন।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে শাহাবাগ থানা পুলিশ রোজিনা ইসলামকে নিয়ে আদালতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার এএসআই কমল।
আদালতে নেয়ার আগে শাহবাগ থানার এসআই মো. আবদুল্লাহ বলেন, `রোজিনা আপা সুস্থ আছেন।'
রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সকাল ৮টার দিকে রোজিনাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে।
সোমবার (১৭ মে) রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী এ মামলা দায়ের করেন।
মন্ত্রণালয় অভিযোগ করছে, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপনীয় নথি সরিয়েছেন, কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল ভ্যাকসিন ক্রয়-সংক্রান্ত।
অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট প্রণয়নকাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় বলা হয়, বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিবের একান্ত সচিবের দফতরে ঢোকেন। তখন একান্ত সচিব দাফতরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সে সময় রোজিনা ইসলাম দাফতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানোর পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন।
এর আগে সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকরা জানান, আমরা সচিবালয়ে গিয়ে রোজিনাকে একটি কক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসে।
সোমবার রাতে রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একইসঙ্গে তারা একটি লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিয়েছেন। সেখানে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগটি গ্রহণ করেছি।
এদিকে রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিন্টু, রোজিনা একজন সৎ সাংবাদিক। বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ করার জন্য এর আগেও তাকে একাধিকবার নাজেহাল হতে হয়েছিল। এটিও তেমন কোনো ঘটনা হতে পারে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা সোমবার সচিবালয় ও শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য রোজিনা ইসলামের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে বিষয়টির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
এস