জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশের আট শান্তিরক্ষীসহ ১২৯ জনকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য মরণোত্তর দ্যাগ হ্যামারশোল্ড পদক দিয়েছে জাতিসংঘ।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল দেয় জাতিসংঘ। এর মধ্যে বাংলাদেশের আটজন শান্তিরক্ষী রয়েছে। একক দেশ হিসেবে এ সংখ্যা সর্বাধিক। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ফেসবুক পেজের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ৪৪ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে স্ব স্ব দেশের মেডেল তুলে দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পদক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত জীবনের শক্তি, বিশুদ্ধতা ও নশ্বরতাকে বার বার স্মরণ করছে।
কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের আট শান্তিরক্ষী হলো, মালিতে নিয়োজিত মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল মো. হালিম, কঙ্গোতে নিয়োজিত মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূঁইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স করপোরাল মো. সাইফুল ইসলাম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স করপোরাল মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত আনমিস্ মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পদকগুলো নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন মিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান। এসব মেডেল কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, আমি জাতিসংঘের পতাকাতলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী নীল হেলমেটের সব সাহসী পুরুষ ও নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি। তাদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পবিত্র দায়িত্ব পালনের সময় অনেক বীর সেনানী হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু, এই ত্যাগ জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনের কোনো আহ্বানে সাড়া দিতে কখনো আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং শান্তির লক্ষ্যে নিজেদের উৎসর্গ করার দৃঢ় সঙ্কল্পকে আরও জোরদার করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বুভুক্ষা ও দুর্দশামুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করে শান্তির অনুসন্ধান করলেই শুধু কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী শান্তিরক্ষীদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো স্থায়ী শান্তির পথে: শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যুব-শক্তিকে বৃদ্ধি করা। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে সাত দশক ধরে জাতিসংঘে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী সামরিক ও বেসামরিক শান্তিরক্ষীদের বিদেহী আত্মার স্মরণে শান্তিরক্ষী মেমোরিয়াল সাইটে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ বাংলাদেশ। জাতিসংঘের নয়টি শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত রয়েছে বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজার শান্তিরক্ষী। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছে বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী।
এসএন