আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

জীবনের বরকত নষ্ট করে সকালের ঘুম

জীবনের বরকত নষ্ট করে সকালের ঘুম

খাবার ও ঘুম একে অন্যের পরিপূরক। ঘুম ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ঘুম শরীরের ক্লান্তি দূর করে, মনে প্রশান্তি আনে এবং কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীর ও মন কোনোটিই ভালো থাকে না।  

ফজরের নামাজের পর ঘুমানো অনেকের অভ্যাস। আবার অনেকেই এমন আছেন, যারা ঘুমের কারণে ফজরের নামাজও পড়তে পারেন না। ফজরের নামাজের পর ঘুমানো নিয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। আগেকার সময়ে মানুষ সাধারণত ফজরের পর ঘুমাতো না। ফজরের পর তারা কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির শেষে কাজে বের হতো। এটাই ইসলামের শিক্ষা। যেকারণে মানুষের জীবন জীবিকার বরকত কমে যায় তার মধ্যে একটি কারণ হলো অসময়ে ঘুম

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসে এশার পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে বলেছেন। আর সকালবেলা উম্মতের রিজিকের মধ্যে বরকত দেয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। তাই অধিক রাত পর্যন্ত জাগ্রত না থেকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া সুন্নত। যাতে ফজরের পর ঘুমিয়ে বরকত থেকে বঞ্চিত হতে না হয়।

ঘুমের স্বাভাবিক সময় হলো রাত। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা শারীরিক সুস্থতার জন্য অতি জরুরি। এটিই ইসলামের চাওয়া এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৈনন্দিন জীবনের আমল।   

আলোর মধ্যে এবং অতি গরমে ঘুমানো স্বভাবতই কঠিন। এ জন্য মহান আল্লাহ ঘুমের উপযোগী করে রাতকে অন্ধকারচ্ছন্ন এবং শীতল করে সৃষ্টি করেছেন। আবার সব মানুষ ও প্রাণীর ঘুমের জন্য রাতকে নির্ধারণ করেছেন।  

ইশার নামাজ আদায়ের পর আর কোনো কাজ না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। এটিই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা এবং সারা জীবনের আমল। তিনি সন্ধায় ঘুমানো এবং ইশার নামাজের পর না ঘুমিয়ে গল্প-আড্ডা দেয়া পছন্দ করতেন না। 

চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকেও অনেক রাত করে ঘুমানো সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তারপর নৈশ আলাপ করেননি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭০২)। 

ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ, যা শেষ রাতে আদায় করতে হয়। রাসুল (সা.) নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে উদ্বুদ্ধ করতেন। ভোরে উঠে পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করতে পারলে প্রফুল্লচিত্তে এবং পবিত্র মনে সকাল শুরু হয়। 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমায়, তখন শয়তান তার মাথার শেষভাগে তিনটি গিরা দেয়। প্রতিটি গিরার সময় সে এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দেয় যে এখনো রাত অনেক রয়ে গেছে, শুয়ে থাকো। অতঃপর সে ব্যক্তি যদি জেগে ওঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর যদি সে অজু করে, তবে দ্বিতীয় গিরা খুলে যায়। আর যদি সে নামাজ আদায় করে, তাহলে সব গিরাই খুলে যায়। ফলে প্রফুল্লতার সঙ্গে পবিত্র মনে তার সকাল হয়, অন্যথায় আলস্যের সঙ্গে অপবিত্র মনে তার সকাল হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৯৬) 

ফজরের নামাজের পর সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার ফলে দিন সংকীর্ণ হয়ে যায়। কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। পক্ষান্তরে ফজরের নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত এবং ইশরাক নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু করতে মহান আল্লাহ সারা দিনের জন্য বান্দার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে দিনটি হয়ে ওঠে বরকতময়। হাদিসে সকালের ঘুম বর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। সাখর আল-গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০৮) 

মহান আল্লাহ দিনকে বানিয়েছেন মানুষের জীবন-জীবিকা ও সার্বিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘এবং করেছি দিনকে জীবিকা আহরণের সময়।’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ১১) 

ঘুমানোর কয়েকটি সুন্নত ও আদব :

১. আল্লাহর নাম স্মরণ করে খাবারের বাসনপত্র ঢেকে রাখা, ঘরের দরজা বন্ধ করা এবং বাতি নিভিয়ে ঘুমের অনূকুল পরিবেশ তৈরি করে ঘুমানো। (বুখারি, হাদিস : ৩১০৬)

২. হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমানো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৫৪)। অজু করে নেয়া আরো উত্তম।

৩. বিছানা ঝেড়ে নেয়া। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৬১)

৪. ডান কাত হয়ে শোয়া। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৫৬)

৫.   ঘুমানোর দোয়া ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া’ পড়ে ঘুমানো। (বুখারি, হাদিস : ৬৯৬৫)।

৬. ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করে ঘুমানো। (বুখারি, হাদিস : ৩১০)

৭. সুরক্ষার জন্য সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে মাথা থেকে দেহ পর্যন্ত যত দূর হাত যায় বুলিয়ে ঘুমানো। (বুখারি, হাদিস :  ৪৭২৯)

৮. ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহি-ল্লাজি আহয়্যানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর’ পাঠ করা। (বুখারি, হাদিস : ৬৯৬৫)

পরিশেষে বলা যায়, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাবারের মতো ঘুম একান্ত প্রয়োজন। শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি করতে ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ঘুমের জন্য রাত আর কাজের জন্য দিন অতি সমীচীন সময়। ইশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়ে ভোরে উঠে যেতে হবে। ফজরের নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং ইশরাকের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কর্মকাণ্ড শুরু করতে পারলে দিন বরকতময় ও কর্মময় হয়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।

সূত্র: কুরআনের আলো 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জীবনের | বরকত | নষ্ট | করে | সকালের | ঘুম