আজ ১৫ নভেস্বর। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে একটি কাউন্টিং ঘড়ি এতদিন টিকটিক করে সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট আর ঘণ্টার হিসাব করছিল। আজ সব কাঁটা থেমে গেছে! মানব ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন রচিত হয়েছে আজ। কারণ বিশ্বের জনসংখ্যা আজ ৮০০ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে।
দিনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ডে অব এইট বিলিয়ন’।
জাতিসংঘ আগেই জানিয়েছিল যে, আজ অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ৮০০ কোটির ঘরে পৌঁছাবে! এই সংখ্যা ৭০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটিতে পৌঁছাতে লেগেছে ১২ বছর।
এ মাইলফলকের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এ বছরের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস একটি মাইলফলক বছরে পড়েছে। এটি আমাদের বৈচিত্র্য উদযাপন করার, মানবতাকে স্বীকৃতি দেয়ার এবং স্বাস্থ্যে চমৎকার অগ্রগতি উদযাপনের উপলক্ষ; যা গড় আয়ু বাড়িয়েছে, মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে।’
জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধের উন্নতির কারণে মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
এছাড়া বেশ কিছু দেশের জন্মহারে উচ্চহারের কারণেও জনসংখ্যা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অনুমান করা হয় যে, ১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রথমবারের মতো ১০০ কোটিতে পৌঁছেছিল। এরপর ১২৩ বছর অর্থাৎ ১৯২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০ কোটির ঘরে পৌঁছাতে। তারপর মাত্র ৩৩ বছরের মাথায় ১৯৬০ সালে মানুষের সংখ্যা হয় ৩০০ কোটি! সেই থেকে খুব দ্রুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এ খবরে অনেকেই বেশ উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন, বাড়তি মানুষের চাপ সামলাতে পারবে কি আমাদের এই পৃথিবী?
বিপুল এই জনসংখ্যাকে বিশ্বের জন্য বোঝা নয়, বরং অপার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ বলছে, ৮০০ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে অসীম সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছানোর ব্যাপারটি মানুষের জন্য এবং এই পৃথিবীর জন্য এক মাইলফলক।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম। কোনো দেশে যদি ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম থাকে, তাহলে সে দেশকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লাভজনক অবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে এই অবস্থায় রয়েছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে অনুকূল বলে গণ্য হয়। এই অবস্থা কোনো দেশে হাজার বছরে একবারই আসে। এটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হবে। চীন ও জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। তবে আমাদের দেশে এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৮০০ কোটি জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ লোক বাস করছে এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও চীনে। ভারতে ১৩৯ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় চার গুণ এবং যুক্তরাজ্যের ২০ গুণের বেশি।
চীনের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি। ভারতে প্রতিদিন ৮৬ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। অন্যদিকে চীনে দিনে জন্ম নিচ্ছে ৪৯ হাজার ৪০০ শিশু। এই হার অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালে ভারত হবে বিশ্বের শীর্ষ জনসংখ্যার দেশ। ২০৬০ সালে দেশটির জনসংখ্যা হবে ১৬৫ কোটি।
গার্ডিয়ান বলছে, এখন থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার বৃদ্ধির অর্ধেকের বেশি ঘটবে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মিসর, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, তানজানিয়া ও ভারতে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ২ শতাংশ বাংলাদেশে রয়েছে। এটি বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশ এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার হিসাব মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ। বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও।