আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

মাহমুদউল্লাহ ব্যাকআপ নয়, ব্যাকবোন

মাহমুদউল্লাহ ব্যাকআপ নয়, ব্যাকবোন

তার রঙিন ক্যানভাসে আঁকা হলো সেঞ্চুরির অনবদ্য এক গল্প। সাদা পোশাকে এখনও যে ফুরিয়ে যাননি তিনি তা আরও একবার প্রমাণ করলেন। সঙ্গে স্পষ্ট বার্তাও দিলেন, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস পার্মানেন্ট।’ ফিরে আসার চিত্র কীভাবে আঁকতে হবে, তা হারারের ২২ গজে তুলির আঁচড়ে ছড়িয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৬ মাস ধরে তাকে টেস্টে বিবেচনা করা হয় না। 'মাহমুদউল্লাহ টেস্ট খেলতে পারেন না'- এই ধারণাটা দেশের ক্রিকেটে যেন জেঁকে বসেছে।

জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট দলেও তার নাম ছিল না। গত ২৬ জুন হুট করে তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয় তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিমের 'বদলি' হিসেবে। দলে নিতে বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পান। স্কোয়াডে সুযোগ পেলেও মাহমুদউল্লাহ দলে থাকবেন কি না নিশ্চিত নয়। অবশেষে সেই সুযোগটি আসে তামিমের অনুপস্থিতিতে। 

হাঁটুর চোটে তামিম নেই। দলের শক্তি ও অভিজ্ঞতা বাড়াতে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে নামলেন মুমিনুল। সেই তার ব্যাটেই রক্ষা বাংলাদেশের। অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতে রাঙালেন নিজের ৫০তম টেস্ট ম্যাচ। সঙ্গে জানান দিলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ ব্যাকআপ নয়, ব্যাকবোন।’ 

অথচ তাকে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবতে বলেছিলেন জাতীয় দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। ঘটনাটি বেশি দিনের আগের নয়। 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। এরপর দল থেকে বাদ পড়েন। তাকে সাদা পোশাকে আর বিবেচনায় আনেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। পাশাপাশি গত বছর লাল বলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও তাকে রাখেনি বিসিবি।

২০২০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে মাহমুদউল্লাহর পারফরম্যান্স ছিল দৃষ্টিকটু। প্রথম ইনিংসে ২৫, দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে নাসিম শাহর হ্যাটট্রিক বলে মাহমুদউল্লাহ যেভাবে আউট হন তাতে টিম ম্যানেজমেন্টের বিরক্তি ধরে যায়। এরপর তাকে টেস্ট দল থেকেও বাদ দিয়েছিল দল। 

ডমিঙ্গো জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার পর চার টেস্টে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট হাসেনি। এ সময়ে তার ইনিংসগুলো ছিল এরকম, ৭, ৭, ১০, ১৫, ৬, ৩৯*, ২৫ ও ০। এমন পারফরম্যান্সে বাদ মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ১৬ মাস পর দলে ফিরে মাহমুদউল্লাহ রাঙালেন নিজের ক্যানভাস। সেঞ্চুরিতে ভাস্বর তার ইনিংস। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর ১০ ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৬৭।

১৩২ রানে ৮ উইকেট হারানো দলের হাল ধরতে ক্রিজে আসেন মাহমুদউল্লাহ। তার সঙ্গী ছিলেন লিটন দাস। আগের রাতে লিটন ৯৫ রানে আউট হয়ে হতাশ করেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ দলকে হতাশ করলেন না। সেই ৯৫ রানে থেকেই রয় কাইকে পরপর দুই চার হাঁকালেন। তাতে সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্কে পৌঁছে যান অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। রানের ফুলঝুরিতে মাহমুদউল্লাহ হারারে রাঙিয়েছেন আপন ছন্দে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।  

টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও তিন অংকের মোটামুটি কাছে চলে গিয়েছিলেন। তিনিও ৯২ বলে ৭০ রান করেন। বাউন্ডারি মারেন ১৩টি। এছাড়া সাইফ (০), সাদমান (২৩), শান্ত (২), মুশফিক (১১), সাকিব (৩), মিরাজ (০)- কেউই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। প্রথম দিনের শেষদিকে ক্যারিয়ারের ১৭ নম্বর টেস্ট ফিফটি তুলে নেন বিপদের বন্ধু হিসেবে খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।  

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মাহমুদউল্লাহ | ব্যাকআপ | ব্যাকবোন