মাত্র তিন মাসের স্পোকেন কোর্স করে যদি ছেলে-মেয়েরা অনর্গল ইংরেজি বলতে পারে, তাহলে ১২ বছরে আমরা কী শেখাচ্ছি? তারা ইংরেজি বলতে পারছে না কেন? এটা তাদের কাছে দুর্বোধ্যই কেন থাকছে? তার মানে আমাদের শেখানোর পদ্ধতিতে ভুল আছে। আমরা সেই ভুল শুধরে এখন শিক্ষাটাকে সঠিক জায়গায় আনতে চাচ্ছি। বললেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
রোববার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ‘ফিউচার অব এডুকেশন অ্যান্ড ওয়ার্ক: স্টেপিং স্টোন টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ‘ফায়ার সাইট চ্যাটে’ তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যে খুব ভালো বাংলা বলছি, তাও নয়। ইংরেজির কথা যদি ধরি, আমরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে, অর্থাৎ ১২ বছর ধরে ইংরেজি শেখাচ্ছি। অথচ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তারা কতটা ইংরেজিতে একটু স্বস্তির জায়গায় আছে। চাইলেই যে কোনো জায়গায় নিজের মনের ভাবটা প্রকাশ করার মতে জায়গায় কয়জন আছে?
তিনি বলেন, এর কিছু কারণও আছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, আমরা প্রথমেই ইংরেজিটাকে গ্রামার দিয়ে বেঁধে ফেলি। আমরা বাচ্চাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলি দেই। কেউ একজন ইংরেজিতে কিছু কথা বলছে, তার কথাটা কতটা শুদ্ধ হলো, তা নিয়ে হইচই করি, ঠাট্টা-ব্যঙ্গ করি।
অভিভাবকদের উদ্দেশে ডা. দীপু মনি বলেন, অভিভাবকরা এখন চরম ব্যস্ত। বাবা-মা দুজনই চাকরি করেন। বাবা-মা সময় দিতে না পারায় অন্যভাবে সন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করতে চান। বলা হলো, প্যারেন্টিং অ্যাপের কথা। কিন্তু আমাকে একজন বলেও ফেললেন- আমরা তো এতকিছু শেখাই। গরু-ছাগল কীভাবে পালন করতে হবে, হাঁস-মুরগি পালনও শেখাই। কিন্তু মানুষের বাচ্চাকে কীভাবে পালন করতে হবে, সেটা ভালোভাবে শেখাই না। এ জায়গাটাতে আমাদের ভাবতে হবে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও অভিভাবকদের সন্তানদের সময় দিতে হবে। ওদের ওপর কিছু চাপিয়ে না দিয়ে, যা করতে চাই, সেটা করতে দিতে হবে।
জিপিএ-৫ নিয়ে উন্মদনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই যে এসএসসির ফল প্রকাশ হলো, জিপিএ-৫ নিয়ে উন্মাদনাও শুরু। সন্তান জিপিএ-৫ না পেলে যেন সামাজিক সম্মানটা আর থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়াতে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্ছ্বাস-আনন্দে সবাই ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু এর একটু কম পেলে সবার মধ্যে যেন নিস্তব্ধতা। কেউ আর টু শব্দটাও করে না। কেউ কেউ তো তার বাচ্চা পরীক্ষা দিয়েছিল, সেটাও বলতে চান না। এটা বাচ্চাদের মনের ওপর চরম চাপ ফেলে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থী। সেই জায়গাটাতে একটা কোয়ালিটি নিশ্চিত করা দরকার। সেটা সম্ভব হলে পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা গত চার বছর কাজ করছি। মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি, রিসার্চ করেছি। এরপর সেখানে ১২টি বিষয়ের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছি এ বছর থেকে। যেগুলো দেশে-বিদেশে শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ করে দেবে।
এএম/