আর্কাইভ থেকে ফিচার

হাজারো রহস্যে ভাসছে যে হ্রদ!

হাজারো রহস্যে ভাসছে যে হ্রদ!
‘নলখাগড়ার ভাসমান দ্বীপে বসবাস’ শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এটাই সত্যি। ইনকা সভ্যতার সময়কার কথা। রাজ্যসীমা বাড়াতে নানা এলাকা দখল করছিলো ইনকারা। বিভিন্ন আদিবাসীদের ওপর হামলা করে সেসব দখল করতো তারা। ইনকাদের এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উরু উপজাতিরা বসবাসের জন্য নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করে। সিদ্ধান্ত নেয় জলের ওপর বাস করবে তারা। তোতোরা নামের এক ধরণের নলখাগড়া শুকিয়ে বিশাল ভেলার মত দ্বীপ তৈরি করে। সেই দ্বীপেই গড়ে তুলে বাড়িঘর। ঘরগুলোও তোতোরা দিয়ে তৈরি। জীবন-যাপনের সব আয়োজন এ ভাসমান দ্বীপেই। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন মানব বসতি দেখা যায়নি। ইনকা বা স্প্যানিশদের আক্রমণ হলেই তারা এই ভাসমান দ্বীপগুলো ভাসিয়ে দূরে চলেযেতো।এতে একদিকে আত্মরক্ষা হতো অন্যদিকে নিজেদের বাড়িঘরও থাকতো সুরক্ষিত। সেই থেকে শুরু, এখনও এই নলখাগড়ার ভাসমান দ্বীপে মানুষের বসবাস। উরু উপজাতির বংশধররাই শত শত বছর ধরে এই দ্বীপে বসবাস করছে। বসবাসের ব্যতিক্রমধর্মী এই দ্বীপগুলো গড়ে তোলা হয়েছে তিতিকাকা হ্রদের মাঝে। তিতিকাকা হ্রদটি পেরু এবং বলিভিয়ার সীমান্তে । পেরুর পুনো শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই এই দ্বীপের অবস্থান। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ নৌ-চলাচলযোগ্য হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩, ৮১০ মিটার। জলের পরিমাণ হিসেব করলে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় লেক এটি। কিংবদন্তির আরো অনেক রহস্য ঘিরে আছে তিতিকাকা হ্রদে। প্রায় ৬ কোটি বছর আগে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পেআন্দিজ পর্বতমালায় ফাটল ধরে। তখন হীমবাহ গলা পানি জমে সৃষ্টি হয় তিতিকাকা হ্রদের। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫ নদী এই হ্রদে এসে মিলিত আছে। প্রাচীন সভ্যতা ইনকার নিদর্শন দেখা যায়তিতিকাকা হৃদের তীরে। হ্রদটির আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাচীন আদিবাসী আমেরিকান সভ্যতা। ইনকা মিথোলজি অনুসারে প্রথম ইনকা রাজা ম্যানকো কাপাকের জন্মস্থান এটি। ইনকাদের অন্য একটি মিথে বলা হয়, ‘সৃষ্টিকর্তা দেবতা’ সূর্য, চাঁদ এবং তারা সৃষ্টির আগে, এই লেক থেকে উঠেছিলেন। এই লেকের নাম রয়েছেআটলান্টিস কিংবদন্তিতেও। তাতে বলা হয়ে থাকে এই হ্রদের পানির নিচে হারিয়ে যাওয়া এক শহর আছে। গবেষকরা তিতিকাকার নীল জলের নিচে প্রাচীন একটি মন্দিরের সন্ধানও পেয়েছেন। এই কারনে ধারণা করা হচ্ছে, পানির নিচে সত্যি সত্যি প্রাচীন কোনো শহর ডুবে আছে। তিতিকাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। হ্রদটির আয়তন প্রায় ৮ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর ১৯তম বৃহত্তম  হ্রদ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯৬ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। তিতিকাকার সর্বোচ্চ গভীরতা ৯৩১ ফুট।  গড় গভীরতা প্রায় ৬০০ ফুট। হ্রদটির তীরে ৩০ লাখ মানুষের বাস। হ্রদের চারপাশে বাস করা স্থানীয়রা তিতিকাকার পানিতে মাছচাষ ও খামার করে। এইহ্রদের নীল পানি, আদিগন্ত খোলা আকাশ আর রহস্যেবারবারটানে দর্শনার্থীদের। যা প্রান্তিক অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। এখন সেই জাদু কিছুটা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে বর্তমানে হ্রদটি মারাত্বকভাবে দূষিত হয়েছে। এ কারণে ২০১২ সালেই গ্লোবাল নেচার ফান্ড হ্রদটিকে সে বছরের বিপন্নতম হ্রদ বলে অভিহিত করে। তবে জলবায়ু সংকটের কারণে এ পরিবর্তনগুলো আরও চরম আকার ধারণ করেছে।  

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন হাজারো | রহস্যে | ভাসছে | হ্রদ