জাতীয়

ভালোবাসা দিবস যেভাবে এলো

ভালোবাসা দিবস যেভাবে এলো
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। যদিও এ দিনে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব সবার প্রতিই ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়; তবু এর ভিন্নমাত্রা দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলে। এ দিন তার একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে ভিন্ন মাত্রায়। যদিও বলা হয়, ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিন বা তারিখ নেই; সপ্তাহের সাত দিন এবং বছরের ৩৬৫ দিনই ভালোবাসার দিন। তবু ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা প্রকাশের একটি প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। কেন এ দিনটিকেই ভালোবাসা প্রকাশের দিবস হিসেবে নেয়া হয়েছে এর পেছনে কতগুলো ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে। ইতিহাস থেকে যে কয়টি কারণ জানা যায় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে কয়েকটি ঘটনা। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালপি। তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস ছিলেন দেব-দেবী পুজারী। সম্রাট তাকে দেব-দেবী পুজা করতে বললে তিনি তা অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। এ দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ থেকেই প্রেমিক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে আরেকটি মত পাওয়া যায়। তরুণ-তরুণীদের অনেকেই ফুল উপহার নিয়ে কারারুদ্ধ সেন্ট ভ্যালেন্টাইকে দেখতে আসতেন। কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে আসতো। একসময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যান। তার আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পায় মেয়েটি। যুবক-যুবতীদের প্রতি তার ভালোবাসা আর ভ্যালেন্টাইনের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা জানতে পেরে সম্রাট ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে আরেও একটি মত পাওয়া যায়। রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তার সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে দরকার হয় বিশাল সেনাবাহিনীর। এজন্য সেনাবাহিনীতে যুবকদের যোগদানে বাধ্য করতে বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সম্রাট। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনও এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। তিনি গোপনে তার গির্জায় বিয়ে পড়ানোর কাজও করতে থাকেন। তিনি পরিচিতি পেলেন ‘ভালোবাসার বন্ধু বা ‘Friend of Lovers’ নামে। কিন্তু এ বিষয়টি সম্রাট ক্রাডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। এর বাহিরে অন্য একটি মত প্রচলিত আছে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালিত হত। রোমানরা বিশ্বাস করতেন জুনোর ইচ্ছা ছাড়া কোনও বিয়ে সফল হয় না। পরদিন তারা লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে তুরুণ-তরুণীদের মেলায় র‌্যাফেল ড্রর মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই করতেন। এমন অনেক প্রচলিত ঘটনা, তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস নিয়ে। একেকজন একেকভাবে এর যুক্তি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তবে এ কথা ঠিক মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তর। আর এ ভালোবাসা থেকেই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের হাত ধরে। লন্ডনে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরুটি করেন। তার চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকেই আমাদের দেশে দিনটির শুরু। প্রেমিক-প্রেমিকারা এই দিনটিকে ঘিরে সারা বছর জুড়েই কল্পনার জগৎ সাজাতে থাকেন। এ দিনে নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু'ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভালোবাসা | দিবস | যেভাবে | এলো