আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

আজ কুমারী পূজা

আজ কুমারী পূজা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার মহা অষ্টমী আজ। দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে কুমারী পূজা। সোমবার (৩ অক্টোবর) মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে পূজা অর্চনা। 

অষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। রাতে হবে সন্ধি পূজা। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ পূজার জন্য শাস্ত্রমতে তাদেরই বেছে নেয়া হয়, বিশেষ করে যাদের মন সৎ, নিষ্পাপ। এ গুণ কেবল কুমারীদের মধ্যে থাকতে পারে, এ ভাবনা থেকে তাদের দেবী রূপে পূজা করা হয়। সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছরের কন্যাকে কুমারী পূজার জন্য মনোনীত করা হয়। 

শাস্ত্র ও পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, কোলাসুরকে বধ করার মধ্যে দিয়ে কুমারী পুজোর প্রচলন শুরু হয়। শোনা যায়, কোলাসুর একসময় স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করায়, বিপন্ন দেবকুল মহাকালীর শরণাপন্ন হয়। দেবতাদের কাতর আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন।

এরপর থেকেই মর্ত্যে শুরু হয় কুমারী পুজো। এক্ষেত্রে দেবীজ্ঞানে যে কোনও কুমারীকেই পুজো করা যায়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারীর পুজোই সর্বত্র দেখা যায়। 

শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চোদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।

নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেয়া হয়। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনসহ কয়েকটি স্থানে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধি পূজা শুরু হবে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং শেষ হবে বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে।

মূলত দুর্গা পূজার মূল পর্ব শুরু হয় সপ্তমীতে। চলে দেবী দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ১৬টি উপাদানে দেবীর পূজা চলে। সপ্তমীর সকালে পূজার শুরুতেই দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান করানো হয়। এরপর করা হয় নবপত্রিকা স্থাপন। এছাড়া দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমে দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দ্বীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা।

মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর দূর্গোৎসব শেষ হবে।

এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। আর উমা কৈলাসে ফিরবেন নৌকায় যার অর্থ শস্য ও জল বৃদ্ধি।

পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এ সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হচ্ছে ২৪১টি মণ্ডপে, যা গতবারের চেয়ে ৬টি বেশি।

এবার মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয়েছে মণ্ডপ পাহারার জন্য।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন আজ | কুমারী | পূজা