‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক’ পেলেন ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান
দেশের কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক-২০২৩’ পেয়েছেন আট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর ‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক’ দেওয়া হচ্ছে। এবার তৃতীয় বারের মতো এই সম্মাননা দেওয়া হলো।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওতে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচিতদের হাতে এই সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
পুরো আয়োজনটি আরটিভির পর্দায় শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে প্রচার করা হয়।
দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক-২০২৩ এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
এ ছাড়া সেরা খামারি (মৎস্য) ক্যাটাগরিতে রাজশাহীর আবু হানিফ, সেরা কৃষাণী ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের ইসরাতুন নাঈম, সেরা কৃষি উদ্যোক্তা চাঁদপুরের নুর মোহাম্মদ, সেরা কৃষক নরসিংদীর মো. হযরত আলী, সেরা উদ্যান চাষি ঝিনাইদহের মুছা মাস্টার, সেরা কর্মকর্তা ঝিনাইদহের হাসান আলী এবং আনোয়ার সিমেন্ট শিট সেরা খামারি (প্রাণী) ক্যাটাগরিতে রেহানা আক্তার আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে আনোয়ার সিমেন্ট শিট এবং কৃষি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পপি’কে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আরটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বাবলু বলেন, সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেই চমৎকার কৃষি উদ্যোগ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমি আমার পরিবারের একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের জানাতে চাই, সেটা হলো—খাওয়ার জন্য আমাদের কখনও চাল কিনতে হয় না। গত প্রায় ২০ বছর ধরে আমার মা কৃষিকাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালীর সেনবাগে প্রতিবছর ধানচাষ করেন। সেই জমির ধান থেকেই আমাদের সারা বছরের চালের ব্যবস্থা হয়।
তিনি বলেন, আমি গ্রামে গেলে খুব অবাক হই এটা দেখে যে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা কতোটা বদলে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষির যান্ত্রিকিকরণ এমন ব্যাপকভাবে হয়েছে যে এখন আর কেউ গরু দিয়ে হালচাষ করে না, ধানও কেউ হাতে মাড়ায় না। এক খণ্ড জমিতে মিশ্র পদ্ধতিতে এখন ১০ থেকে ১২ ধরনের ফসল ফলানো হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে আম, আনারস, কলা ও বাদামের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েসন করা এমনকি বিদেশে পড়াশোনা করা ছেলে-মেয়েরাও এখন কৃষিকাজে ঝুঁকছে।
আরটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমাদের শিক্ষিত তরুণরা এখন গরু-ছাগল ও মাছের খামার করার মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। আমাদের নগরবাসীরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। তারা এখন ছাদবাগান করছেন, কেউ কেউ বারান্দায় সবজি বাগান করছেন।
তিনি আরো বলেন, ছোটো ছোটো এই উদ্যোগগুলো আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখছে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, উদ্ভাবন, গবেষণা ও সৃজনশীলতায় ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে দেশের কৃষি ব্যবস্থা, তাদের মধ্য থেকে আটজন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা ‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক-২০২৩’ প্রদান করছি। আমি মনে করে, আরটিভির এই উদ্যোগ কৃষিখাতে চলমান সবুজ বিপ্লবকে আরও গতিশীল করবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও আরটিভির ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আজকে আমাদের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের যেই অবস্থান, এর জন্য সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ প্রাপ্য আমাদের কৃষক এবং কৃষিকাজে সংশ্লিষ্টরা। কারণ, করোনাভাইরাসের মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বে যখন টালামাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। এটি আমাদের কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্যই।
আরটিভির ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমানে বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। স্বাধীনতার পর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। এই কৃষকদের এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতির কারণে আজকে আমাদের অনেকগুলো খাদ্যপণ্য উদ্বৃত্ত এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আমরা বিশ্বের অনেক জায়গায় স্থান করে নিয়েছি। আমাদের দেশের কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আরটিভি যে কৃষি পদক দিচ্ছে এটি আমাদের কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্তদের উৎসাহিত করার জন্য। এই কাজে এনআরবিসি ব্যাংক এবং আনোয়ার গ্রুপ আমাদের সহযোগিতা করছেন। এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আরটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ মোরশেদ আলম এমপি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের কৃষিখাতে এক ঐতিহাসিক সবুজ বিপ্লব শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের কালরাতে দুষ্কৃতিকারীরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। কৃষি এ দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার প্রধান উৎস। এ দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে কৃষি অবলম্বন করেই। দেশের কৃষিখাতে নিয়মিত গবেষণা ও উদ্ভাবন হচ্ছে। এসব মেধাবী ও পরিশ্রমী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে তুলে ধরার দায়িত্ব গণমাধ্যমের। সেই লক্ষ্যে আরটিভি তৃতীয়বারের মতো কৃষি পদক দিচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আরটিভি গতানুগতিক একটি টেলিভিশন চ্যানেল নয়। চ্যানেলটি সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। যেগুলো আমাদের বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আমাদের বর্ণাঢ্য সমস্ত সম্ভারকে সামনে নিয়ে আসে। কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান আমরা সপরিবারের দেখার ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। সেদিক থেকে আরটিভি একটি অনন্য অসাধারণ অবস্থান ইতোমধ্যে তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, শিষ্টাচার, পরিশীলতা এবং তার ভেতর থেকে সংস্কৃতিকে কতোটা উজ্জীবিত করে নিয়ে আসা যায়। যেমন—মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক বিভিন্ন নাটক-অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অনবদ্য অবদান রাখে, তাদের কীভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়, উৎসাহ দেওয়া যায়। নানানভাবেই আরটিভি এগিয়ে চলেছে। এজন্য আরটিভির অনলাইন ভিউয়ার্সের সংখ্যা সমকালীন সময়ে অন্যান্য টেলিভিশনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে অন্ধকারের বাংলাদেশ থেকে আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের কৃষি এক অপার বিস্ময়। টুঙ্গিপাড়ার বাগিয়ারবিলের পাশ থেকে উঠে আসা একজন শেখ হাসিনা গণভবনকে পরিণত করেছেন এক আনিন্দ্য সুন্দর কৃষিখামারে। পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কবুতর, কী নাই সেখানে। এটাই হচ্ছে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক।
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের পথচলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। সেই বাংলাদেশ আজকে অন্যান্য দেশের দুঃসময়ে-দুর্দিনে অর্থবিত্ত দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন খাতকে এগিয়ে নিতে ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর পাশাপাশি আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসায় আমরা আরও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি উর্বরতা নিয়ে আরটিভি যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে, এর জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আরটিভির যাত্রা আরও সমৃদ্ধ হোক ও উর্বর হোক।
অনুষ্ঠানে আরো ব্ক্তব্য রাখেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, আনোয়ার গ্রপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম জাবেদ প্রমুখ।
অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। এর ফাঁকে ফাঁকে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।