৭০ বছরের পুতিনের ৩ সন্তানের জননী ‘প্রেমিকা’ আলিনা!
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই নাকি ‘প্রেমিকা’র জন্য গোপনে একটি কাঠের প্রাসাদ গড়তে শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। সেই প্রাসাদের ভেতরের ছবিই নাকি এই প্রথম প্রকাশ্যে এনেছে রাশিয়ার একটি বেসরকারি সংবাদ সংস্থা। বিশাল জায়গা জুড়ে বাগান, বিশাল সুইমিং পুল, স্পা— কী নেই তাতে! আর কী কী রয়েছে এই প্রাসাদের অন্দরে? নিজস্ব ট্রেনে ‘প্রেমিকা’র প্রাসাদে যান পুতিন।
২০০০ সালের মে মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন পুতিন। তখন তিনি লুডমিলা পুতিনার সঙ্গে দাম্পত্যে। তবে তাতে আলিনা কাবায়েভার সঙ্গে তার রসালো সম্পর্ক নিয়ে মুচমুচে গল্পগাথায় ছেদ পড়েনি। অলিম্পিক্স সোনাজয়ী নোবেক রিদ্যমিক জিমন্যাস্ট আলিনার জন্যই নাকি সে সময় থেকে প্রাসাদ গড়ছিলেন পুতিন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য রাশিয়ায় পরিচিতি রয়েছে ‘প্রোয়েক্ট’-এর। সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিবেদনে দাবি, আলিনার জন্য গড়া ওই গোপন প্রাসাদের ছবি এই প্রথম প্রকাশ্যে এনেছেন তারা। মস্কো থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে ভালদাই এলাকায় জঙ্গলের ভেতরে রয়েছে একটি কাঠের প্রাসাদ। রুশ অভিজাত এলাকায় ওই প্রাসাদের নিরাপত্তায় নাকি মোতায়েন থাকেন পুতিনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা।
রাশিয়ার জ়ারদের প্রাসাদের ধাঁচেই নাকি গড়া হয়েছে এই প্রাসাদটিকে। ২০১৩ সালে লুডমিলার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় পুতিনের। ‘প্রোয়েক্ট’-এর দাবি, তার আগে থেকেই আলিনার সঙ্গে প্রেম ছিল প্রেসিডেন্টের। তবে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ওই প্রাসাদে আলিনাকে প্রথম বার নিয়ে যান তিনি।
রিদ্যমিক জিমন্যাস্টের তারকা আলিনা এককালে অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত ইভেন্টে ২টি সোনা জিতেছিলেন। সঙ্গে রয়েছে ১৪টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক। তবে ২০০১ সালে নিষিদ্ধ মাদক সেবনের দায় চাপে তার উপর। ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ায় আলিনার উপর দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যমের কৌতূহল কমেনি। সৌজন্য, পুতিনের সঙ্গে তাঁর তথাকথিত সম্পর্ক।
৩৯ বছরের আলিনা নাকি ৭০ বছরের পুতিনের অন্তত ৩ সন্তানের জননী। যদিও এ বিষয়ে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন দুজনেই। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর পুতিন-ঘনিষ্ঠ হিসেবে আলিনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্রিটেন, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
‘প্রোয়েক্ট’-এর দাবি, আলিনার জন্য কাঠের প্রাসাদ গড়ার পর ২০২০ সালে ভালদাইয়ের জঙ্গলে আরও একটি প্রাসাদ গড়েছিলেন পুতিন। মূল প্রাসাদের অদূরেই রয়েছে সেটি। পরের বছর আলিনার জন্য নাকি ভালদাইয়ের প্রাসাদের কাছে আরও নির্মাণকাজ শুরু করেন পুতিন। প্রাসাদের কাছে বোট রাখার জন্য তিনি একটি বন্দর গড়েছিলেন বলে দাবি।
রুশ সংবাদ সংস্থাটির দাবি, পুতিনের প্রেমিকার বিশাল প্রাসাদের চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটি ছোট খাল। প্রাসাদে ঢোকার রাস্তায় যেতে গেলে ওই খালের জলে নৌকো ভাসিয়ে দিতে হয়। এর পরেই দেখা মেলে ধ্রুপদী স্থাপত্যের ধাঁচে গড়া একটি বিশাল প্রাসাদ। যা এত দিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল।
প্রাসাদে ঢোকার আগে অবশ্য ২৮ একর জুড়ে থাকা একটি বাগান পেরোতে হবে। ওই জমিতে নাকি আগে একটি নার্সারি ছিল। তাতে রাশিয়ার জাতীয় উদ্যানের জন্য কনিফার্সের চারা পোঁতা হত। সেগুলি খানিকটা বড় হলে লাগানো হত জাতীয় উদ্যানে।
প্রোয়েক্ট জানিয়েছে, পুতিন এবং তার ‘প্রেমিকার প্রাসাদ থেকে খানিকটা দূরেই রয়েছে একটি বিশাল স্পা কমপ্লেক্স। তাতে রয়েছে সূর্যঘড়ি। ওই স্পা কমপ্লেক্সেই নাকি রয়েছে ৮২ ফুটেরও বেশি বড় একটি সুইমিং পুল। সঙ্গে একটি হামাম এবং সান বাথ নেওয়ার বন্দোবস্ত। সৌন্দর্যচর্চার জন্য মাড রুম ছাড়াও মালিশ করানোর ব্যবস্থা রয়েছে তাতে। এ ছাড়া, রূপটানের জন্য আলাদা জায়গা থেকে শুরু করে দাঁতের সমস্যা হলে তা ঠিক করার জন্য বন্দোবস্তও করা হয়েছে এতে।
২০২০ এবং ’২১ সালের গ্রীষ্মে নাকি ‘প্রেমিক ‘র প্রাসাদে একটি কার্টিং ট্র্যাকও তৈরি করিয়েছিলেন পুতিন। আগে সেখানে হেলিপ্যাড ওঠানামার বন্দোবস্ত করা ছিল। প্রাসাদের ডান দিকে বাচ্চাদের খেলাধুলোর জন্য একটি বিশাল মাঠও রয়েছে।
প্রোয়েক্ট-এর দাবি, প্রেমিকার প্রাসাদে যাওয়ার জন্য নিজস্ব ট্রেন ব্যবহার করেন পুতিন। সে জন্য এই প্রাসাদের কাছে একটি গুপ্ত স্টেশনও গড়া হয়েছে। তার পাহারায় থাকেন পুতিনের রক্ষীরা। উপগ্রহ চিত্রে ওই গুপ্ত স্টেশনটি ধরা পড়েছে বলেও দাবি।
‘প্রেমিকা’র জন্য যে শুধু এই প্রাসাদ গড়ে দিয়েছেন পুতিন, তা নয়। রুশ সংবাদ সংস্থাটির দাবি, সোচিতে রয়্যাল পার্কের বসতি এলাকায় আলিনার জন্য একটি পেন্টহাউসও গড়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রায় ২৮,০০০ বর্গফুটের ওই পেন্টহাউসটিতে সুইমিং পুল, সিনেমা হল, অতিথিদের বসার জন্য প্যাটিয়ো এবং হেডিপ্যাড ওঠানামার জায়গাও রয়েছে। এটিই নাকি রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অ্যাপার্টমেন্ট।
প্রোয়েক্ট-এর দাবি, ‘রাশিয়ার মুকুটহীন রানি হলেন আলিনা।’ ফলে আলিনার জন্য এ হেন প্রাসাদ বা পেন্টহাউস গড়া হলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।