আর্কাইভ থেকে জাতীয়

জুনে চলবে পদ্মা সেতুতে রেল

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের রেললাইন স্থাপনকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। দুই শিফটে দিনের পাশাপাশি রাতেও চলছে কার্যক্রম। মূল সেতুজুড়েই নির্মাণসামগ্রী নিয়ে প্রায়ই চলছে রেলট্রাক। চলতি মার্চের শেষ নাগাদ ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে মাদারীপুরের শিবচরের দুই স্টেশন হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়াল রানের প্রস্তুতি চলছে। আগামী জুনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুর বিষয়টি জানান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, ৩০ মার্চ সেতুতে কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর উপর মাত্র ৭ মিটার কাজ বাকি আছে। এখানে শুধু স্লিপার বসানোর কাজ বাকি। এটা হয়ে গেলেই আমার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালু করতে পারব।

এদিকে গেলো ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে পদ্মা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে আগামী জুনেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মূল সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দিন-রাত দুই শিফটেই চলছে কার্যক্রম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি ভায়াডাকের ওপর পাথরবিহীন প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার রেল সেতু স্থাপন হচ্ছে মূল সেতুতে। ইতোমধ্যে মূল রেল সেতুর প্রায় ৯৮.৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে ৩২ কিলোমিটার। সফলভাবে ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেললাইনে রেল ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে আরও আগেই।

আরও জানা যায়, এর মধ্যে ভায়াডাক উড়াল রেললাইন চার কিলোমিটার আর মাটির ওপর দিয়ে ২৮ কিলোমিটার। ভায়াডাকের চার কিলোমিটার রেললাইন প্রস্তুত করা হয়েছে পাথরবিহীন। আর ২৮ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে পাথর দিয়ে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত তিনটি স্টেশন রয়েছে, ভাঙ্গায় জংশন, শিবচরে দুটি স্টেশন। স্টেশনগুলোর ওপর দিয়ে ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা জংশনটি আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। রেল সংযোগ প্রকল্প ঢাকা থেকে মাওয়া শিবচর ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ১ম পর্যায় এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ২য় পর্যায়।

প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ তথ্যমতে, মূল সেতুতে ৬.১৫ কিলোমিটারের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৬.০৫৮ কিলোমিটার। পুরো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৫.৯২ শতাংশ।

মাওয়া ভাঙ্গা অংশের কাজ হয়েছে ৯১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬৮ শতাংশ। মাওয়া স্টেশনসম্পন্ন হয়েছে ৯০ শতাংশ, শিবচরের পদ্মা স্টেশন ৮৬ শতাংশ, শিবচর স্টেশন ৭৩ শতাংশ, ভাঙ্গা জংশন ৬০ শতাংশ, ভাঙ্গা পুরাতন স্টেশন ৭৫ শতাংশ।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ট্রাক ইঞ্জি. মো. শওকত আলী জানান, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে কর্মরত সব দেশি-বিদেশিদের মাঝেই এখন উৎফুল্ল। কারণ পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি। আগামী জুনেই শেষ হবে কাজ। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে চলবে রেল। পদ্মা রেল সেতু চালু হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে নতুনমাত্রা যোগ হবে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন