আর্কাইভ থেকে ফিচার

ইরানের শিয়া অনুসারীদের দৃষ্টিতে রোজা ও তারাবিহ

ঘড়ি না থাকার যুগে ইরানীরা সেহরির সময় সম্পর্কে অবহিত নিজেরদের অভিজ্ঞতা দিয়ে।  যেমন কেউ কেউ আকাশের তারকারা ওপর নির্ভর করতেন। অনেকেই মিজান (এক ধরনের সময় পরিমাপক যন্ত্র) ও পারভিন বা সোরাইয়া তারকা দেখে সেহরির সময় মেনে চলতেন।  অনেকেই আবার মোরগের ডাকের উপর নির্ভর করতেন।

ইরানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন বিশ্বাস করেন, মোরগ রাতে দীর্ঘ পরিসরে তিনবার ডাক দেয়। প্রথমবার অর্ধ রাতে, দ্বিতীয়বার অর্ধ রাত পার হওয়ার পর ও সর্বশেষ ভোরবেলা এই ডাক দেয়। এই মোরগ ডাকের মাধ্যমেই সেহরির সময় নির্ধারণ ইরানীদের রীতিনীতির একটি মাধ্যম।

অতীতে সেহরির সময়, একটি দল- পাড়া বা মহল্লায় ঢোল ও গজল গেয়ে জাগিয়ে তুলত লোকজনকে । ইরানের সিরজান অঞ্চলে এ দলটি মানুষের বাড়ির দরোজায় টোকা দিয়ে জাগিয়ে তুলতো। টোকা দিতে দিতে বাড়ির মালিককে সম্ভাষণ করে কবিতা আবৃত্তি করত।

এই গোষ্ঠীটি রমজান মাসের শেষ দিনগুলোতে সবার বাড়ি ও দোকানে যেত। লোকদের কাছ থেকে উপহার, হাদিয়া বা ঈদি গ্রহণ করত। এ হাদিয়া গ্রহণ করতে গিয়েও দলবদ্ধভাবে কবিতা আবৃত্তি করত।

ইরানের বুশেহর প্রদেশে এরা দোম দোম সেহরি নামে পরিচিত। এরা রমজানের রাতগুলোতে দাম্মাম (এক প্রকারের তবলা) বাজিয়ে লোকজনকে জাগিয়ে তুলতো।

ইরানীদের কেউ কেউ বিশ্বাস করে, ঘুমের সময় যদি মাটির কসম খাওয়া হয়, তবে সেহরির সময় জেগে উঠা সম্ভব। যেমন—কেরমান প্রদেশের সিরজান অঞ্চলের লোকজন ঘুমের আগে আঙুল দিয়ে মাটিকে আঘাত করে বলে, হে মাটি! আমার পাপ তোমার ঘাড়ে, সেহরির সময় আমাকে জাগ্রত করো।

পবিত্র রমজান মাসে ইরানীদের মসজিদগুলো আরও সরব হয়ে ওঠে। স্বেচ্ছাসেবকরা দাতব্য কাজ করে। মসজিদে কিংবা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ ইরানেও আছে।

মাহে রমজান এলেই কোরআন তেলাওয়াতের হিড়িক পড়ে যায় ইরানে।  রমজানের শেষ দশকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে লাইলাতুল কদর পালিত হয়। দলে দলে মুসল্লীরা মসজিদে এতেকাফ করেন।

রোজার সময় সাধারণ মানুষের ওপর যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, সে দিক বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি বাজারে কখনও কখনও পণ্যমূল্যে কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া হয়। সরকারি বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে সরকারি-বেসরকারি দুধ, দই ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রচুর সরবরাহ থাকে।

রোজা উপলক্ষে ইরানেও অফিস-আদালতের সময় পরিবর্তিত হয়। রোজায় রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে পর্দা টেনে দেওয়া হয়। তবে রুটির দোকান খোলা থাকে। রোজার সময় যেসব শিশু, বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ নারী-পুরুষ রোজা রাখতে পারেন না, তাদের খাবারের যোগান আসে এই রুটির দোকান থেকে।

ইফতারি শেষে ইরানে শিয়া মুসলমানদের মধ্যে তারাবির ব্যস্ততা নেই। কারণ শিয়া মাজহাবে তারাবি নামাজের বিশেষ গুরুত্ব নেই।

রমজান মাসের শেষ রাতগুলোতে খোদা হাফেজ মাহে রমজান নামে একটি অনুষ্ঠানও এখানকার বিভিন্ন শহরে প্রচলিত রয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি কোনো কোনো শহরে ২৭ রমজান, আবার কোনো কোনো শহরে রমজান মাসের শেষের দিকের সেহরির পরপর, আবার কোথাও কোথাও মাগরিব ও এশার নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন