আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ ছিন্নমূল মানুষকে ইফতার করান তারা

গেলো চার বছর ধরে প্রতি রমজান জুড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণ করে আসছে গাইবান্ধায় জুমবাংলাদেশ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এই ইফতার আয়োজনে সহযোগিতা করছেন কলেজ পড়ুয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সাধ্য অনুযায়ী ২০০ থেকে ২৫০ জন মানুষের মাঝে বিতরণ করে থাকেন এ ইফতারির প্যাকেট। তাদের এ কাজকে স্বাগতম জানিয়েছেন সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ।

রমজান মাসের প্রথম দিন থেকেই বিকাল হলে শহরের রেলস্টেশন সংলগ্ন সুবিধা বঞ্চিত পথ শিশুদের জুমবাংলাদেশ স্কুল মাঠে শুরু হয় ইফতারি তৈরির জন্য কার্যকক্রম। বিভিন্ন আইটেমের ইফতার সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয় ইফাতারি প্যাকেট। প্রতিদিন এ কাজ করছে কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও এ কাজের সহযোগিতা করে আসছেন আরও অনেকেই। প্যাকেটের কাজ শেষ হলেই ইফতারির একঘণ্টা আগে থেকেই সুবিধা বঞ্চিত জুমবাংলাদেশ স্কুলের শিক্ষার্থীদের  ইফতার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের ছিন্নমূল মানুষের কাছে। বিতরন করা হয় বিভিন্ন বসতি ও স্টেশনে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে।

সুবিধাবঞ্চিত শিশু আশা মনি বলেন, রোজার শুরু থেকেই আমরা প্রায় চল্লিশ পঁঞ্চাশ জন ইফতার করি। বিকাল চারটার দিকে  জুমবাংলাদেশ স্কুলে যাই। সেখানে কায়দা পড়ান হুজুর। তিনি চলে গেলে শুরু হয় আমাদের ইফতার করার আয়োজন।

স্টেশনে প্লাটফর্মে বসবাতরত  আমেনা বেওয়া বলেন, আমার কোনও বাড়ি ঘর নেই। প্লাটফমেই রাতে ঘুমাই। মানুষ যে খাবার দেয় তাই খাই। রমজান মাসে কোন খাবারের কোন সমস্যা হয় না। সন্ধ্যা হলেই ইফতার দিয়ে যায়।

সংগঠনের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান বলেন, রমজান মাসে সুবিধা বঞ্চিত শশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়াও তাদের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়। পরে প্যাকেট করা ইফতার নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

সংগঠনের সদস্য শারমিন খাতুন বলেন, পুরো রমজান মাসজুড়ে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ইফতার বিতরণের এ কার্যক্রমের মাঝেই আমাদের আত্মতৃপ্তি। মানুষের সহযোগীতা পেলে রোজার অন্য দিনগুলো সুবিধাবঞ্চিত ওই মানুষগুলোর জন্য কাজ করে যেতে চাই।

সংগঠনের সদস্য সজিব হোসেন বলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অসহায় মানুষের হাতে একটি খাবারের প্যাকেট তুলে দিলে যে তারা কতো খুশি হয়। একাজের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে আমি বুঝতে পারতাম না।

সমাজসেবক মাহদী মাসুদ পলাশ বলেন, মানুষের অর্থ সম্পদ থাকলেই হয় না। মানুষকে একমাস খাওয়ানো কাজ নেওয়া সহজ না। কয়েকজন শিক্ষার্থী শহরের সুবিধা বঞ্চিত শিশুসহ ছিন্নমুলক মানুষকে পুরও রমজান মাসেই এক বেলা খাবার তাদের হাতে তুলে দিতে পারছে। আসলেই এটি একটি মহৎ কাজ। একাজ সবার দ্বারা সম্ভব না।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোক্তাদির রহমান রোমান বলেন, শহরে স্টোশন কলোনীতে একদল শিক্ষার্থীর চেষ্টায় ছিন্নমূল মানুষকে পুরো রমজান জুড়ে ইফতারি প্যাকেট তুলে দেয়। এই কাজ সবার পক্ষে করা সম্ভব নয়। একাজ নিঃসন্দেহে  প্রশংসনীয়।

প্রতিদিন ইফতারির এ আয়োজন করতে খরচ হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এমন মানবিক কাজের সহযোগিতা করে আসছেন অনেকেই।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন