হাজার কোটি টাকা দামি সব ব্র্যান্ডের গাড়ি পড়ে আছে মরুভূমিতে
ফেরারি, ল্যাম্বরগিনি, বেন্টলি, বিএমডাব্লিউ, রোলস রয়েসের মতো সব সুপারকার ,পড়ে আছে মরুভূমিতে! কোনো মালিক নেই! বিষয়টি অবাক হলেও সত্যি!! আরো মজার ব্যাপার হলো বিলাসবহুল এসব গাড়ির মালিকরা এগুলো ইচ্ছে করেই ফেলে যান। গাড়ি গুলোর মালিকদের বেশিরভাগই ধনী শেখ। আবার কিছু মালিক সেখানে কাজ করতে যাওয় বিভিন্ন দেশের ধনী প্রবাসী।
একটি দুটি নয় কয়েক হাজার হাজার দামী গাড়ি একদম অনাদরেই পড়ে আছে। এযেনো বিলাসবহুল গাড়ির মেলা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও গাড়ি গুলো কিন্তু নষ্ট বা অকেজো নয়।
এমন চিত্র ধনীদের শহর দুবাইয়ে। এই জায়গাটিতে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং বিলাস বহুল গাড়ির কবরস্থান।
উচ্চ-বেতনের কারনে প্রতিবছর দুবাইতে অনেক প্রবাসী কাজ করতে যায়। তাদের অধিকাংশই ইউরোপিয়ান কিংবা আমেরিকান।
ভালো কোনো চাকরী পেয়ে একবার ইনকাম করা শুরু করলেই, তারা বিলাসবহুল গাড়িসহ বিভিন্ন রকমের দামী জিনিসপত্র কেনেন।
বিলাসবহুল এসব গাড়ি গুলো ঋণ করেই কেনেন তারা। সহজে পাওয়া এই ঋণ সুবিধাই গলার কাটা হয়ে উঠে তাদের।
কারন, দুবাইতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরি ছেড়ে দেয়ার হার অনেক বেশি। ফলে অনেক প্রবাসী আর্থিক সংকটে পড়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।
এক পর্যায়ে দেশে চলে যাওয়াকেই বেশি নিরাপদ মনে করেন। কারন দুবাইয়ের শরিয়াহ আইনে ঋণ নিয়ে কেনা গাড়ি বিক্রি করা নিষিদ্ধ। আর ঋণ পরিশোধ না করলে কারা বরণ করতে হয়। তখন তাদের অনেকেই পালিয়ে যান।
দুবাইয়ের আইন অনুযায়ী যখন কেউ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন, তখন সে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে না। কর্তৃপক্ষ ঋণগ্রস্থ ব্যাক্তির গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
আটক ব্যাক্তি ঋণ পরিশোধ না করলে জেল থেকে বের হতে পারেন না। আবার ঋণ নিয়ে কেনা গাড়ি বিক্রিও করতে পারে না।
কারন পুরনো গাড়ি বিক্রি করতে হলেও নিয়ম অনুযায়ী মালিককে তার সব বকেয়া ঋণ পরিশোধ করে তারপর বিক্রি করতে হবে।
অন্যদিকে দুবাইয়ের বিত্তশালী শেখদের অর্থের পরিমান এতোই বেশি যে, নিজের বিলাসবহুল গাড়িটি একটু পুরোনো হলেই সেটা ফেলে দেন। আর পুরনো গাড়ি ইচ্ছে করলে কারো কাছে বিক্রি করে দিতে পারতেন। তবে এসব ধনীর দুলালরা এতোই অলস যে, সেই সময়টুকুও তাদের নেই।
আর কিনে নেন নতুন মডেলের গাড়ি।
যার কারনে, দুবাইয়ের বিভিন্ন পার্কিং এলাকা, রাস্তা কিংবা মরুভূমি থেকে প্রায় সময়ই পরিত্যক্ত গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবছর প্রায় ২ থেকে ৩ হাজারেরও বেশি গাড়ি এভাবে উদ্ধার করা হয়। রাস্তা কিংবা অন্য কোনো জায়গা থেকে এরকম পরিত্যক্ত গাড়ি উদ্ধার করার পর, কর্তৃপক্ষ গাড়ির মালিককে নোটিশ পাঠায়।
১৫ দিনের মধ্যে মালিক যোগাযোগ না করলে গাড়ি গুলো state property-তে পরিণত হয়। গাড়িগুলোর স্থান হয় সুপারকার কবরস্থানে। যেখানে গাড়ি গুলো দিনের পর দিন অযত্নে পড়ে থাকে।
পরে এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করে ঋণ দাতাদের টাকা সরকারীভাবে পরিশোধ করা হয়।
আবার, কিছু গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে সেগুলো কম দামে বিক্রি করে দেয়া হয়।
সবচেয়ে মজার বিষয় কী জানেন? দুবাই পুলিশ যে বিলাসবহুল গাড়িগুলো ব্যবহার করে তার অনেকগুলোই এই গাড়ির কবরস্থান থেকেই নিলামে কেনা।