ইউজিসি পাচ্ছে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
মঙ্গলবার (৬ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবিত ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (এইচইএটি)’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য তোলা হয়েছে।
একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। প্রকল্পটির জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে ইউজিসি। দেশের সকল সরকারি ও ইউজিসির অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়: এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ-এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যসহ উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইটি) ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীদের হার বৃদ্ধি করা এবং অর্থ বিনিয়োগের একটি রিজিওনাল উইন্ডো হিসেবে আলোচ্য প্রকল্পটি উচ্চশিক্ষায় নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম বলা হয়েছে, ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট ১টি আবাসিক ভবন নির্মাণ; ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ বর্গফুট ১টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ; ১ লাখ ৪৯ হাজার ২০৯ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৪টি যানবাহন ক্রয়; কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, টেলিকমিউনিকেশন সরঞ্জাম, ও তথ্য প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ক্রয়; প্রকল্প অনুদান, গবেষণা অনুদান, সাংস্কৃতিক অনুদান ও অন্যান্য অনুদান; আসবাবপত্র ক্রয়; বৃত্তি বা স্কলারশিপ ও ইন্টার্নশিপ ভাতা; সেমিনার ও কনফারেন্স; পরামর্শক সেবা; বই ও সাময়িকী, প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপন; দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ; অন্যান্য।
২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকাভুক্ত (পৃষ্ঠা-৫০৬, ক্রমিক-১৪৬)।
একনেক কার্যপত্রে দেখা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৫) উচ্চ শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কার্যক্রম গ্রহণ করে এ খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। উপরন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (৪ আইআর) মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও রিসোর্স, উদ্ভাবন এবং পেটেন্টিং, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও অ্যাক্রেডিটেশন, ৪ আইআর এবং তার পরবর্তী সময়ের জন্য স্নাতকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অ্যাডভান্সড বিজ্ঞান গবেষণা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক গবেষণা অনুদান প্রদান এবং শিক্ষাদান ও শেখার পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, উচ্চ শিক্ষার জন্য এসডিজি এর নির্ধারিত লক্ষ্য হলো একজন স্নাতককে মানানসই একটি চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের প্রাসঙ্গিকতার নিশ্চয়তা প্রদান এবং বিশ্ব নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২০-২০৪১ অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন করে প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র বিমোচনে সহায়তা করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও কার্যক্রম অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি’স, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এর উদ্দেশ্যগুলোর সাথে সম্পূর্ণরূপে সংগতিপূর্ণ।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যসহ উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষার্থীদের চাকরির যোগ্যতা বৃদ্ধি ও ৪ আইআর-এর জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, আইটি সেক্টরে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি তথা নারী পুরুষের সমতা আনয়ন ও শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্বানুমোদনে অর্থ বিভাগ শর্ত আরোপ করে যে, মোট ব্যয়ের মধ্যে যে পরিমাণ অর্থ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্যয় হবে তা অর্থ বিভাগ হতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুকূলে ঋণ এবং অবশিষ্ট অর্থ সরকার হতে অনুদান হিসেবে দেয়া হবে।
এজন্য ইউজিসি ও অর্থ বিভাগের মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি এবং ইউজিসি ও নির্বাচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সাবসিডিরজ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। ঋণের সুদের হার ও মেয়াদ অর্থ বিভাগ হতে পরবর্তীতে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (এইচইএটি)’ শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পটি শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।