গাইবান্ধায় নিম্নমানের বালু দিয়ে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের অভিযোগ
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে নিম্নমানের বালু ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজসে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করছেন। ফলে রাস্তার কাজের স্থায়ীত্ব হবে না। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ করতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের মানুষের সুবিধার্থে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হচ্ছে। এই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কটি গাইবান্ধার অংশে সুন্দরগঞ্জ থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলার উপর দিয়ে সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট বাজারে ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কে মহাসড়কে গিয়ে সংযুক্ত হবে। এর মধ্যে সড়কটি গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর হয়ে ধাপেরহাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার। রংপুরের মেসার্স খাইরুল কবির রানা নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজের দায়িত্ব পান। সড়কের উভয়পাশে প্রস্থ বাড়বে ৬ ফুট। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
চলতি বছরের ১১ মার্চ দরপত্র আহবান করা হয়। গত ৮ জুলাই কার্যাদেশ দেয়া হয়। গত ১৫ জুলাই কাজ শুরু হয়। আগামী বছরের ৮ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। সূত্রটি জানায়, সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে শুন্য দশমিক আট এফএম (ফাইনেস মডুলার্স) বালু দিতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে নিম্নমানের বালু দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসি অভিযোগ করেন, কাঁদামাটি মিশ্রিত স্থানীয় নিম্নমানের বালু ব্যবহার করা হয়েছে। তারা জানান, এলাকাবাসির উদ্যোগে এই সড়কে ব্যবহৃত বালু সড়ক ও জনপথ বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।
ওই দপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, এখানে যে বালু ব্যবহার করা হয়, তা শুন্য দশমিক তিন থেকে চার এফএমের বেশি হবে না।
সাদুল্লাপুর উপজেলার পাঠানোছা গ্রামের কলেজছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, তার বাড়ির পাশেই এই সড়কটি প্রশস্তকরণ কাজ হচ্ছে। কাঁদামাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। ফলে বাতাসে সেই কাঁদামাটি মিশ্রিত বালু ওড়ে যাচ্ছে। যাতায়াতেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই গ্রামের এক চাকরিজীবি বলেন, নিম্নমানের বালু দিয়ে কাজ করায় কয়েকজন গিয়ে বাঁধা দেয়। তাতেও কাজ হয়নি। তারপরও সেই নিম্নমানের বালুই ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খাঁন বিপ্লব বলেন, এই সড়কটি দিয়ে সুন্দরগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের যানবাহন চলাচল করবে। এতে করে ঢাকার সাথে ৬০ কিলোমিটার সড়ক কমে যাবে। অথচ নিম্নমানের বালু ব্যবহার করলে সড়কের স্থায়ীত্ব কমে যাবে। সরকারের টাকা অপচয় হবে।
উপজেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, শুন্য দশমিক আট এফএমের বালু দূর থেকে আনলে ব্যয় বেড়ে যাবে বিধায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগসাজসে ও তাদেরকে ম্যানেজ করে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করছেন।
এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালকসহ এলজিইডির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা কর্মএলাকা পরিদর্শন করেন। তারা সরেজমিন ঘুরে ইতোমধ্যে ভরাট করা ১০ কিলোমিটার সড়ক থেকেই নিম্নমানের বালু সরাতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন। তারপরও বালু পরিবর্তন না করেই নিম্নমানের বালু দিয়ে কাজ করছেন ঠিকাদার। নিম্নমানের বালু দিয়ে কাজ করা প্রসঙ্গে ঠিকাদার খাইরুল কবির রানা দাবি করেন, যে বালু দেওয়া হয়েছে তা আর দেয়া হবে না। নির্দিষ্ট পরিমাপের বালু দিয়েই কাজ করা হবে।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, লোক দেখানো ও ছবি তুলে কর্তৃপক্ষকে দেখানোর জন্য ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১০০ মিটার জায়গায় বালু পরিবর্তন করা হয়। অবশিষ্ট সড়কে নিম্নমানের বালুই রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল হাসান যোগসাজসের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বালু পরীক্ষা করার সময় কিছু বালু নিম্নমানের পাওয়া যায়। পরে ঠিকাদারকে সেই বালু পরিবর্তন করার কথা বলা হয়। নির্দিষ্ট বালু দিয়েই কাজ করতে হবে। অন্যথায় আবার পরীক্ষার সময় নির্দিষ্ট বালু পাওয়া না গেলে তাকে আবারও বালু পরিবর্তন করার কথা বলা হবে।
একই বিষয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারকে নিম্নমানের বালু ব্যবহারে নিষেধ করা হয়েছে।
এস