আর্কাইভ থেকে জাতীয়

নারীদের বাদ দিয়ে এদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়: প্রধানমন্ত্রী

বর্তমান সরকার সমাজের সব পর্যায়ে নারী ও কন্যাশিশুর গঠনমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে সোমবার (১০ জুলাই) দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি : নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই নারীদের বাদ দিয়ে এদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও জেন্ডার সমতা অর্থাৎ নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকার নারী ও কন্যাশিশুর অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিতে বিবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ সনদ, বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনসহ সব আন্তর্জাতিক সনদ ও পদক্ষেপ অনুসরণ করে সরকার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সুস্থ-সবল জাতি গঠনের জন্য মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কর্মসূচির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে নারী ও কন্যাশিশুর অপার সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি।’

এ কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন, গণমাধ্যম, সচেতন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে বাংলাদেশকে প্রতিটি সেক্টরে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করি। পরিবার পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী জীবনের মৌলিক অংশ হিসেবে স্বীকৃত। টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহীতার হার বৃদ্ধি পেলে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস পায়, মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধ হয়। সন্তান কম থাকলে স্বল্প আয়েও আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকা যায়। তাই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পরিবার পরিকল্পনার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ সরকার বিগত সাড়ে চৌদ্দ বছরে জনসংখ্যাবিষয়ক বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা, পরিকল্পিত পরিবার গঠন, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাভাবিক প্রসববিষয়ক সবধরনের সেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতার হার বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ মাতৃত্ব, কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য, নারী শিক্ষা ও নারী কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছি। এর ফলে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীরা কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক ছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতি পরিদর্শন করছে। এসব পরিদর্শনের মাধ্যমে তারা দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক পরামর্শ ছাড়াও মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে এবং এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এর ফলে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা এমডিজি অ্যাওয়ার্ড ২০১০ অর্জন করেছি।’

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং দিবসটি উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন