আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের কৃষক

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের চরা লসহ বিভিন্ন এলাকায় ডিজেল চালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে বোরো চাষ করা প্রায় লক্ষাধিক হাজার কৃষক ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকে বোরো চাষের জমির পরিমান কমিয়ে দিয়েছেন। বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করলেও চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ নিয়ে শংসয় প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা। 

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ জানান, এ জেলায় চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধাণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। এ যাবদ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে  ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। গভীর নলকুপের সংখ্যা  ৫৭৮ টিতে ১৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ, অগভীর নলকুপ / বিদ্যুত নির্ভর সেচযন্ত্রর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮১৭ টিতে ৪৪ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ, ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র (শ্যালোমেশিন) এর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার ১৬৬টিতে চাষাবাদ ৫৭ হাজার ২৯৯ হেক্টর জমিতে। উভয় সেচের সুবিধাভোগি কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯ জন। 

কৃষকদের দেয়া তথ্য মতে, সাধারণ দো’আশ মাটিতে বোরো চাষে সেচ দিতে হয় গড়ে ৩০টি। এতে  হেক্টর প্রতি ডিজেল লাগে ২২৫ লিটার। অপরদিকে চরাঞ্চলের জমিতে মৌসুমে গড়ে ৫০টি সেচ দিতে হয়। এতে হেক্টর প্রতি ডিজেল লাগে ৩৭৫ লিটার। 

বর্তমান জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে ডিলাররা কৃষকদের প্রতি লিটার ৮০ টাকায় দরে ডিজেল বিক্রি করছেন। অন্য দিকে জেলার বিভিন্ন বাজারসহ চরা লের বাজারগুলো খুচরা বিক্রেতারা কৃষকদের কাছে ৮৫ টাকা দরে ডিজেল বিক্রি করছেন। গত বছর ডিলাররা প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করতো ৬৫ টাকা এবং খচর বাজারে ব্যবসায়ী বিক্রি করতো ৭০ টাকা। 

এ বছর বোরোও চলতি মৌসুমে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজেল চালিত সেচযন্ত্রে চাষ করা জমিতে হেক্টর প্রতি মোটা অংকের বাড়তি খরচ হবে উপজেলার কৃষকদের। বিশেষ করে চরা লের কৃষকদের গুনতে হবে প্রায় দ্বিগুন টাকা।

কৃষকরা জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ জমিতে হেক্টর প্রতি প্রায় ৪ হাজার  টাকা এবং চরা লে প্রায় ৬৬০০ টাকা সেচ দিতে বেশী ব্যায় করতে হচ্ছে। এছাড়া হাল চাষেরও দাম বেড়েছে। ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র দিয়ে হাল চাষে আগের চেয়ে হেক্টর প্রতি ক্ষেত্র বিশেষে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবমিলিয়ে হেক্টর প্রতি ৫৫০০ টাকা থেকে ৭৭০০ টাকা বেশী ব্যয় হচ্ছে এবার। বাড়তি ব্যায়ের ফলে অনেকে বোরো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন  অনেক কৃষক। 

নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের সাতানা গ্রামের আব্দুস সামাদ জানান, প্রতি বছর ৮ বিঘা জমিতে ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষ করলেও এবার ডিজেলের দাম বাড়ায় ৩ বিঘা জমি কম চাষ করেছেন তিনি। 
একই উপজেলার কেদার ইউনিয়নের চরবিষ্ণুপুর এলাকার কৃষক হারেজ আলী বলেন আমাদের চর এলাকার এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে কমপক্ষে ৫০ লিটার ডিজেল লাগে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো চাষ নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। আমাদের চরে আগের চেয়ে অর্ধেক জমিতে বোরো চাষ হবে। বাকি গুলোতে পাট চাষ হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল গ্রামের কৃষক ওসমান গণি জানান, প্রতি বছর ৫ বিঘা জমিতে ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষ করলেও এবার ডিজেলের দাম বাড়ায় ৩ বিঘা জমি বোরো চাষাবাদ করেছেন তিনি। তিনি আরও জানান প্রতি লিটার ডিজেল ৮৫ টাকা দরে স্থানীয় বাজারে ক্রয় করে এবছর বোরোও লোকসান গুনতে হবে বাহে!
 
একই উপজেলার চর-মোরকমন্ডল চরাঞ্চলের কৃষক ছাইদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান,তাদের এলাকার জমিতে প্রতিদিন সেচ দিতে হয়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে অনেকে বোরো চাষ নিয়ে শংসয় প্রকাশ করছেন। 

তারা আরও জানান, আমাদের এলাকা থেকে ফুলবাড়ী সদর প্রায় ১৫ কিলোমিটার ও বালারহাট বাজার ৮ কিলোমিটা। তারই বাধ্য হয়ে স্থানীয় আনন্দবাজার ও বিডিআর বাজার ৮৫ টাকা মূল্যে প্রতি লিটার ডিজেল কিনতে হয়। ধানের দাম না বাড়লে বড় লোকসানে পড়তে হবে। 

নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের পাওয়ার টিলার মালিক আব্দুল হক ও ফুলবাড়ী উপজেলা ছাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা আগে বিঘা প্রতি হালচাষে ৬০০ টাকা নিতাম। ডিজেলের দাম বাড়ায় এখন ৮০০টাকা নিচ্ছি।  

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন ও নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বোরো চাষে কিছুটা খরচ বাড়বে। তবে ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে যেসব কৃষক বোরো চাষ করবেন তাদেরকে অলটারনেটিভ ওয়াটারিং এন্ড ড্রাইং (এ.ডবিউ.ডি) ভেজানো ও শুকনো পদ্ধতি বোরো চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে পানির অপচয় হবে না। ফলে ব্যায় অনেকটা কমে আসবে। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন