মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য নির্লজ্জ দালালি ছাড়া আর কিছু নয়: হানিফ
বিরোধীদলের মতপ্রকাশে আওয়ামী লীগ সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এমন বক্তব্যকে ‘নির্লজ্জ দালালি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
শনিবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কি চান আপনারা? কার পক্ষে, কোন খেলায় নেমেছেন? আপনাদের এই বক্তব্যগুলো মনে হয় সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি ছাড়া আর কিছু নয়। জাতি আপনাদের এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি কয়েকদিন আগে সমাবেশ করার পর ঢাকার প্রবেশমুখ অবরোধ ঘোষণা দিলো। তারা অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করলেন। এরকম কর্মসূচি কোন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আছে। আপনি রাস্তা বন্ধ করে দিলেন, এটা তো কোনো কর্মসূচি হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তখন পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা করে আহত করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেটার জন্য আজকে মানবাধিকার সংস্থা থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, তারা বলছে সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, আজকে কার পক্ষে ওকালতি করছেন? যে তারেক রহমানের বিপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর জেমস মরিয়াটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, তারেক রহমান অত্যন্ত ভয়ংকর, দুর্ধর্ষ, দুর্নীতি পরায়ণ সন্ত্রাসী এবং সহিংসতার প্রতীক। এটা আমাদের কথা নয়। এই কথা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেই সময়কার রাষ্ট্রদূত। আজকে সেই ব্যক্তি এতো ভালো হয়ে গেল যে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে তাদেরকে নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে সরকার উৎখাত করার খেলায় মত্ত হতে হবে।
হানিফ বলেন, আমরা আজকে আহবান জানাবো, সেই সমস্ত বিদেশি সংগঠন, বিদেশি দূত বা যারা আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন অনুরোধ করবো উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে অনেক বিষয়ে আপনাদের কথা বলার সুযোগ আছে। দয়া করে এই ধরণের একজন প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসী আপনাদের অভিযোগে অভিযুক্ত, কয়দিন আগেও কানাডার ফেডারেল আদালত পঞ্চমবারের মতো সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এরকম একটি দল নিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবেন না। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে মদদ দিবেন না, এই অনুরোধ থাকবে।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্রপতির পুত্র হয়েও শেখ কামাল অর্থ-বিত্তের পিছনে কখনো ছুটেননি। তিনি নিরহংকারী ও নির্লোভ মানুষ ছিলেন। অথচ আজকে আমাদের দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান; তাকে যদি দেখি এই দুইটা মানুষের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন সরকারের মধ্যে সরকার গঠন হয়েছিল। একদিকে তারেক রহমানের মায়ের সরকার আরেকদিকে হাওয়া ভবন বানিয়ে তারেক রহমানের সরকার। এবং হাওয়া ভবনের সরকারই ছিল সবচেয়ে ক্ষমতাধর।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখলে আজকে দুঃখ হয়। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা অনেক সময় অনেক কথা বলছেন। সবচেয়ে অবাক হলাম বিএনপি নামক দলটি যে কোনো বিষয়ে কর্মসূচি করার পর দৌড়ে বিশেষ কোনো রাষ্ট্রদূতের অফিসে বা বাসায় যায়। তাদের কাছে রিপোর্ট করার জন্য। এর মানে কি দাঁড়ালো? তার মানে কি দাঁড়ায় বিএনপির এসকল কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে হচ্ছে?
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কাদেরকে নিয়ে আপনারা এদেশের মানবতার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন? এই বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলছে। যে তারেক রহমান ক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। হাওয়া ভবন বানিয়ে শুধু দেশের অর্থ লুটপাট করেনি তার বিরুদ্ধে যেন কেউ কথা বলতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেব, আহসানুল্লাহ মাস্টার এমপি, নাটোরের মমতাজউদ্দিন আহমেদের মতো সিনিয়র নেতাদের হত্যা করেছিল। আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।
হানিফ বলেন, একজন (তারেক রহমান) স্বীকৃত সন্ত্রাসী। যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের। সেই একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে যে দল চলছে সেই দল নিয়ে আপনারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এসব দেখে দেশের মানুষ অবাক হয়ে যায়।