আর্কাইভ থেকে দুর্ঘটনা

৭ মাসে ফুলবাড়ীতে ১৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পানিতে ডুবে ও বিদ্যুতস্পৃষ্টে গেলো সাত মাসে শিশু ও শিক্ষার্থীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও গলায় ফাঁস দিয়ে ৩ জন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও অন্যান্য কারণে এক, বালু বোঝাই ট্রাক্টর চাপায় এক, মোটরসাইকেল সড়ক দুর্ঘটনায় এক ও অজ্ঞাত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

ফুলবাড়ী থানার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২০ জুলাই ও ৩ আগষ্ট পর্যন্ত উপজেলার ৬ ইউনিয়নে পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যাসহ ১৮ টি প্রাণ অকালে ঝড়ে যায়। ওই সব পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম। জনসচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণা না থাকায় ঠেকানো যাচ্ছে না অপমৃত্যু। সাত মাসে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটনায় চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সচেতনমহল ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দাবি, পানিতে ডুবে, বিদ্যুতস্পৃষ্ট, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাসহ সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে মৃত্যু হওয়ায় জনসচেতনতা মূলক প্রচার-প্রচারণা না থাকায় এ সব মৃত্যু বেড়েই চলছে। তাদের দাবি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ওপর জনসচেতনতাসহ প্রচার-প্রচারণা না থাকায় কিছু অসাধু গ্রাহক অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার ও নিম্নমানের ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার করার কারণেই প্রতিনিয়ত বিদ্যুতস্পষ্টের দুঘর্টনায় ঘটছে। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের অবহেলা ও সচেতনতা না থাকায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েই চলছে।

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহতরা হলেন,আতিকুল ইসলাম বাধনা (১৬), গনেশ চন্দ্র বর্মন (৪২) ,ইন্দ্রজিত চন্দ্র (৩৬) , তোফাজ্জল হোসেন (১২),সীমা আক্তার (২)। পানিতে ডুবে নিহতরা হলেন, মিষ্টি মনি (২), রাকিবুল আদনান আলী (২), জামিয়া (২), আনন্দ হক (২৭), আরাফাত হোসেন (৭), মেরাজ ইবনে মাহাদী (৬), বিথি মনি (২)। গলায় ফাঁস দিয়ে নিহতরা হলেন, শেফালী বেগম (৪৫),তাজুল ইসলাম (৪৮)। সড়কে নিহতরা হলেন, আলম বাদশা (৩০) ও একরামুল হক ওরফে একরা (৩৬)। অন্য দিকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে বিজিবির সদস্য মাহাবুব আলশ (৩২) ও আব্দুল রহমান ৯ মাসের শিশুর অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান জানান, কোনও গ্রাহক যাতে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সেচসহ বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করতে না পারে তা সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহার ও নিম্নমানের ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার না করেন এ বিষয় প্রতিটি পাড়ামহল্লায় জনসচেতনামূলক মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণাসহ উঠান বৈঠক অব্যাহত আছে।

ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ জানান, ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত গেলো সাত মাসে বিদ্যুতস্পৃষ্টে ৫ জন ও ৬ জনের মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও গলায় ফাঁস দিয়ে ৩ জন ও সড়ক দূর্ঘটনায় ২ জনসহ মোট ১৮ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিসহ গ্রাম-গঞ্জে মানুষদের মাঝে বিদ্যুৎ ব্যবহার ও শিশুদের বিশেষ নজর দেয়ার জন্য জনসচেতনা মূলক প্রচার-প্রচারণা পুলিশের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। পাশাপাশি সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করলে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমবে বলে আমার বিশ্বাস।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ জানান, এ ধরণের মৃত্যুর বিষয় সাবধানতার কোন বিকল্প নেই। আমি যোগদানের পর দুইজন শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এখানে মূলত বাবা-মার অসাবধানতার কারণটা বেশি। সাধারণত পুকুর বলেন বা ডোবা বলেন সব মিলে জনসচেতনতা ছাড়া এসব মৃত্যু রক্ষার কোনও বিকল্প নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার বিভিন্ন সময় সভা সমাবেশ ও সেমিনারের মাধ্যমে সচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে সকলকে সচেতন হতে হবে। মানুষ সচেতন হলেই অকাল মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

এএম/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন