আর্কাইভ থেকে দক্ষিণ আমেরিকা

হামলার হুমকিতে মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন স্থগিত

ওয়াশিংটন ডিসিতে উগ্রবাদী হামলার হুমকির কারণে মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

আইনপ্রণেতাদের সতর্ক করে ক্যাপিটল পুলিশ জানিয়েছে, চার মার্চ ক্যাপিটল হিলে আবারও হামলা চালাতে পারে উগ্রবাদী মিলিশিয়ারা। এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীতে।

গেল ছয় জানুয়ারির মতো কোনো সহিংস ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য সতর্কতামূলক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে জোরদার করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড ও পুলিশের নিরাপত্তা টহল।

৪ মার্চ কংগ্রেসের চলমান অধিবেশনে পুলিশ সংস্কার আইন নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল। প্রণোদনা প্রস্তাব নিয়ে সিনেটে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সহিংসতার আশঙ্কায় কংগ্রেসের চার মার্চের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনপ্রণেতাদের জানানো হয়, চিহ্নিত একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী হামলার পরিকল্পনা করছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। কোনো ঝুঁকি না নিতে কংগ্রেসের অধিবেশন নিয়ে আগাম পরিকল্পনায় বদল করতে হয়েছে।

গেল সপ্তাহে কংগ্রেসের এক শুনানিতে এমন হুমকির কথা জানিয়েছিলেন ক্যাপিটল পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ইয়োগান্ডা পিটম্যান। হুমকি থাকায় ক্যাপিটল হিলের আশপাশের এলাকায় সাত ফুট উঁচু নিরাপত্তা দেয়াল রাখা রয়েছে। নিরাপত্তা দেয়ালের ওপর কাঁটাতার দেওয়া আছে। নিরাপত্তা দেয়াল নিয়ে সমালোচনা করেছে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা।

ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড, ওয়াশিংটন মেট্রো পুলিশ, ক্যাপিটল পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জোর তৎপরতা চলছে। এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পুরো রাজধানী।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা আগেই প্রচার করেছে, গেল তিন নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে জালিয়াতি করে হারানো হয়েছে। চার মার্চ দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এমন অমূলক ও বাস্তবতাবিবর্জিত কথা বলছে শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীরা। এটি ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে তারা।

শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের মধ্যে ওথ কিপার্স ও থ্রি পার্সেন্টার্স নামের দুটি উগ্রবাদী গ্রুপ এফবিআইয়ের কড়া নজরে রয়েছে। ট্রাম্প–সমর্থক আরেকটি উগ্রবাদী সংগঠন প্রাউড বয়েজ। এসব সংগঠনের অনেকেই ছয় জানুয়ারিতে ক্যাপিটলে হামলায় যোগ দেয়। এফবিআই জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই এসব উগ্রবাদী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।

সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। নিজেদের সংগঠিত করতে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা এসব উগ্রবাদী। প্রযুক্তি নজরদারির মাধ্যমে বেশিরভাগ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।

এক বিবৃতিতে ক্যাপিটল পুলিশ জানায়, ক্যাপিটল ভবনে হামলার হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।

হুমকির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বিবৃতিতে প্রকাশ করেনি গোয়েন্দারা। তবে ক্যাপিটল পুলিশ জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সার্জেন্ট টিমোথি ব্লোডগেট জানিয়েছেন, আইনপ্রণেতাদের সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রতিবাদ-সমাবেশের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের আসল শপথ নেওয়ার দিন বলে যে প্রচারণা রয়েছে সে সম্পর্কেও জানানো হয়েছে আইনপ্রণেতাদের।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সংবিধানে ২০ জানুয়ারি শপথের দিন নির্ধারণের আগে চার মার্চ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শপথ নিতেন। ৪ মার্চকে ঐতিহ্যের প্রতীকী দিন ধরে নিয়েই প্রচারণা চালায় ট্রাম্প সমর্থক উগ্রবাদীরা।

নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন বলে এখনো মেনে নিতে রাজি নন তাঁর সমর্থকরা।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন