পাঁচ বছর পর ঢাবি ছাত্রলীগের হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার হল সম্মেলন। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রাঙ্গণে বেলা ১১টায় শুরু হয় ১৮টি হলের সমন্বিত সম্মেলন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এছাড়া বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এবি এম মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখার সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
হল সম্মেলন নিয়ে টিএসসিকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী, অন্য ছাত্র সংগঠনের আমন্ত্রিত অতিথি, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত আছেন।
সম্মেলনে প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র দেখাতে এবং মাস্ক পরিধান এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও প্রতিটি আবাসিক হলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে।
সম্মেলনের বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, হল সম্মেলন আয়োজনের জন্য শুরু থেকেই আমাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে উদ্ভূত নানাবিধ বাস্তবতায় সম্মেলন আয়োজনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সমন্বিত হল সম্মেলনের আয়োজনকে সফল করার লক্ষ্যে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ইতিমধ্যে ১৮টি হলের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন বক্তব্য, দাবি-দাওয়া, পরামর্শ শুনেছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেষ্টা করেছি।
নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের নামে অভিযোগ রয়েছে, খারাপ ইতিহাস রয়েছে, কোনো ধরনের মামলা রয়েছে, অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত, বিতর্কিত তাদেরকে অবশ্যই আমরা নেতৃত্বে নিয়ে আসব না। সৎ, মেধাবী ও দেশমাতৃকার জন্য আপসহীন, সামনে জাতীয় নির্বাচনে যে কোনো বাধা মোকাবিলা করতে পারবে এই ধরনের নেতৃত্ব অগ্রাধিকার পাবে।
সম্মেলনের কতদিনের মধ্যে কমিটি হতে পারে- এই প্রশ্নে সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, হল সম্মেলন শেষে সর্বোচ্চ দুই-তিন দিন অথবা এক সপ্তাহ লাগতে পারে। আমি নিজেও পদপ্রত্যাশী ছিলাম, আমরা চাই যতদ্রুত সম্ভব কমিটি দিতে। আমাদের ভাই-বোনেরা অনেকদিন যাবত অপেক্ষা করে আছেন।
সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন মহল ও গণমাধ্যমের যে প্রত্যাশা, এটি প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের নির্ভরতার একমাত্র ঠিকানা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অনিবার্য প্রতিষ্ঠান।আমরা হলগুলোতে তেমনই নেতৃত্ব চাই, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব প্রদান করবে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ভূমিকা রাখবে, যারা পলিটিকাল ব্যারিয়ার থেকে বেরিয়ে ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেবে, যারা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এই হল সম্মেলনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজ গড়ে তুলতে চাই। এই হল সম্মেলনের মাধ্যমে মৌলবাদের বিষ দাঁত ভেঙে দিতে ছাত্র সমাজকে দীক্ষা নেয়ার শপথ দেখাতে চাই! প্যান্ডেমিক পরিস্থিতির কারণে সভা-সমাবেশ নিয়ে সরকারের কিছু বিধিমালা রয়েছে সেগুলো মেনে আমরা সম্মেলন করব। একই সাথে আমরা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করব। যারা অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে শুধু তারাই সম্মেলন আসবেন। আর যারা আংশিক সংক্রমিত রয়েছেন তাদেরকে ইতিমধ্যে সম্মেলনে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮ হল শাখার কমিটি হয় ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এক বছর মেয়াদি এই কমিটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে চার বছর পেরোলেও হয়নি নতুন কমিটি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ৩৩০ জন নেতাকর্মী। প্রতি পদের বিপরীতে প্রত্যাশী প্রায় ১০ জন কোরে।
মুক্তা মাহমুদ