আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

মিয়ানমারে ১৯ যুবককে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেপ্তার ৩

মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ১৯ যুবককে মিয়ানমারে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিলো একটি মানব পাচারকারী চক্র। সেখানে চালানো হতো নানা নির্যাতন। এই আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারীর চক্রের নির্যাতনে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় মূলহোতাসহ  তিনজনকে গ্রেপ্তার  করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোঃ ইসমাইল (৪৫), জসিম (৩৫), মোঃ এলাহী (৫০)। তাঁরা তিনজনই আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।

আজ শনিবার (১৯ আগস্ট) ভোরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার  করা হয়। দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গেলো ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ১৯ জন যুবক মানব পাচার চক্রের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে নৌ-পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মায়ানমারের কোস্টগার্ড কর্তৃক আটক হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা গেলো ১০ জুলাই ২০২৩ তারিখ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্ত (ইউএনও) এর কার্যালয়ে গিয়ে তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার আবেদন জানান। গ্রেপ্তাররকৃত ইসমাইল গেলো ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থানকালীন মায়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামাল এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ইসমাইল দেশে ফিরে এসে মায়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল এবং জামাল এর সাথে যোগসাজশে ১০-১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র গড়ে তোলে ও স্থানীয় এজেন্টদের যোগসাজশে বাংলাদেশে মানবাপাচার চক্রটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবকদেরকে কোন প্রকার অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌছানো হবে এবং মালয়েশিয়া পৌছানোর পরে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে প্রলোভন দেখাত। উক্ত টাকা গ্রেফতারকৃত ইসমাইল, জসিম ও আলম ত্রিশ হাজার টাকা করে এবং চক্রের অন্য সদস্যরা দশ হাজার টাকা করে পেতো এবং বাকী দুই লাখ বিশ হাজার টাকা মালয়েশিয়া অবস্থানরত রশিদুলের নিকট মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরণ করতো।

তিনি বলেন, যে সকল তরুণ ও যুবকরা মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছা পোষণ করতো তাদেরকে জসিম ও এলাহীসহ চক্রের অন্য সদস্যরা উক্ত চক্রের মূলহোতা ইসমাইল এর নিকট নিয়ে আসতো। তারপর তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাস যোগে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের মানব পাচার চক্রের আরেক সদস্য আলমের নিকট হস্তান্তর করতো। টেকনাফের আলম ভুক্তভোগীদেরকে কয়েক দিন রেখে সুবিধাজনক সময়ে তাদেরকে ট্রলার যোগে মায়ানমারে জামালের নিকট পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মায়ানমারের জামাল তার ক্যাম্পে ভোক্তভূগীদের রেখে নির্যাতন করে এবং তা ভিডিও করে গ্রেফতারকৃত ইসমাইলের মাধ্যমে ভোক্তভূগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করত। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে ভুক্তভোগীদের নির্মমভাবে পুনরায় নির্যাতন করা হত এবং যে সকল ভুক্তভোগীর পরিবার মুক্তিপনের টাকা প্রদান করে তাদেরকে মায়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্র সীমা হয়ে মালয়েশিয়ায় রশিদুলের নিকট পাঠিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, চক্রটি গেলো ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ সর্বমোট ২২ জনকে ট্রলার যোগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাচার করার সময় মায়ানমার উপকূলে পৌছালে মায়ানমার কোস্টাগার্ড কর্তৃক ১৯ জন গ্রেপ্তার হয় এবং অবশিষ্ট ৩ জনকে এই চক্রের সদস্য মায়ানমারের জামাল কৌশলে ছাড়িয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপনের জন্য নির্যাতন করে। তন্মধ্যে জহিরুলের পরিবারের নিকট ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। পরবর্তীতে জহিরুলের পরিবার গেলো ১০ মে ২০২৩ তারিখ ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপন প্রদান করে এবং অবশিষ্ট ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়া পৌছানোর পর প্রদান করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী জহিরুলকে ২০২৩ সালের মে মাসের ২য় সপ্তাহে মায়ানমার হতে থাইল্যান্ডের সমুদ্র সীমা হয়ে সিঙ্গাপুরের পাশ দিয়ে মালয়েশিয়া (জোহার বারুত) পাঠানো হয়। নির্যাতনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে মালয়েশিয়া পুলিশের মাধ্যমে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে গেলো ২৪ মে ২০২৩ তারিখ সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে ২৮ মে ২৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়া সরকারের তত্বাবধানে জহিরুলের মৃতদেহ বাংলাদেশে এনে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন