আর্কাইভ থেকে জাতীয়

চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল চান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার পনুর্বহাল চেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। তারা বলেন, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা ছিনিয়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য তারা ষড়যন্ত্র করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা ব্যবস্থা তুলে নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রশ্নবিদ্ধ করতেও পিছপা হয়নি তারা। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে।

একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা দেশ বিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সরকার গঠনে মুক্তিযুদ্ধের ধারা অব্যাহত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সুরক্ষায় আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংগঠনের জেলা কনভেনশন-এ এসব কথা বলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। এর উদ্বোধক ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচয়িতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) এসপি মাহবুব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের শব্দ সৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাসুদ রানা মিন্টু, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাকসুদা সুলতানা ঐক্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, জেলা কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব গোলাম রব্বানী হীরুসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। রণাঙ্গনে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। এ দেশ কারো দয়ায় আমরা পাইনি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা বাংলাদেশ নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করবে, সেটি আমরা হতে দেবো না। দেশ বিরোধীরা-স্বাধীনতা বিরোধীরা আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাতের জন্য নানা রকম চেষ্টা চলছে। এসময় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ষড়যন্ত্রকারীদের সব ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চে যেভাবে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার মাঝে বক্তৃতা দিয়ে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাতে হবে। যেখানে উপস্থিত থেকে জাতিকে বঙ্গবন্ধুর মতো করে আবারও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সামনের নির্বাচনে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। একটি কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা না থাকলে আমরা কেউ থাকব না। তাই আমাদের সংগঠিত হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এবারের নির্বাচন জাতির জন্য, দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটা স্বাধীন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা, এ দেশ শাসনও করবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাই সামনের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যাতে জয়ী হয়, সে লক্ষে আমাদের কাজ করতে হবে।

মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই করতে হবে। সুসংগঠিতভাবে রাজনৈতিক লড়াই করাসহ সে লড়াইয়ে জিততে হবে। কোনো ব্যক্তি একা কিছু করতে পারেন না, সবাইকে সংগঠিত হয়ে পথ চলতে হবে। দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে দেশ ও সরকার বিরোধী যেসব কর্মকাণ্ড চলছে, সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দেশ বিরোধী যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেগুলো মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মোকাবিলা করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। দেশ বিরোধী কোনো শক্তিকে দেশের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। কোনো রাজাকারের গাড়িতে আমরা জাতীয় পতাকা দেখতে চাই না।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন