আর্কাইভ থেকে এশিয়া

মুসলিম শিশুকে মারার নির্দেশে ‘লজ্জিত নই’

শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে এক শিশুকে মারার নির্দেশ দেন শিক্ষিকা। ভারতের এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। তবে এমন নির্দেশ দেয়ার পর লজ্জিত নন বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।

রোববার (২৭ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ‘সংবাদ প্রতিদিন’-র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখলেও তৃপ্তা ত্যাগী নামের ওই শিক্ষিকার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এমনকী নিজের কাণ্ডের জন্য কোনোরকম আক্ষেপও নেই তার।

ঔদ্ধত্যের সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘যা করেছি বেশ করেছি। এতে আমরা একটুও আক্ষেপ নেই। আমি শিক্ষিকা হিসাবে বহু বছর এই গ্রামের মানুষের সেবা করেছি। এই গ্রামের সকলেই আমার সঙ্গে আছেন।’

তৃপ্তা ত্যাগীর বক্তব্য, শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা এভাবেই শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করি।

ক্লাসের মুসলিম শিক্ষার্থীধের চড় মারতে হিন্দু শিশুদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন এক শিক্ষিকা। ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের এক স্কুলের এ ঘটনার ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়।

This footage from India has surfaced, showing a teacher instructing children to slap their 7-year-old Muslim classmate and asking him to be expelled because of his religion ⤵️ pic.twitter.com/92qSRG0B5z

— Al Jazeera English (@AJEnglish) August 25, 2023

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সেই শিক্ষিকা ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বলছেন, 'আমি ঘোষণা করছি যে ক্লাসে যত মহামেডন বাচ্চা আছে তাদেরকে যেন একটা করে চড় মারা হয়। এক জন ছাত্র উঠে এসে ওই শিশুটির গালে থাপ্পড় মারছে।'

আবার এও দেখা যাচ্ছে যে আস্তে থাপ্পড় মারলে শিক্ষিকা রেগে যাচ্ছেন। বলছেন, এভাবে কি মারছ? জোরে মারো। এভাবে একের পর এক ছাত্র যখন ওই মুসলিম শিশুটিকে মারছে তখন সে হাউমাউ করে কাঁদছে।

ফুটেজটি ভাইরাল হতেই মুজফ্ফরনগর পুলিশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মনসুরপুর পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার বিষয়ে থানার ইনচার্জকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যে শিশুটিকে মারা হয়েছিল, সে নাকি নামতা মুখস্ত বলতে পারেনি।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সমাধান হয়েছে যে- তিনি তার ছেলেকে আর ওই স্কুলে পাঠাবেন না। এছাড়া ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ করবেন না।

এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, 'শিশুটির সাথে যা ঘটেছে তার জন্য দায়ী আদিত্যনাথ। সম্ভবত এরপর তিনি এই অপরাধীকে লখনউতে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং তাকে পুরস্কৃত করবেন। কত মুসলিম শিশু নীরবে এমন অপমান সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে তার হিসেব নেই। স্কুলে মুসলিম শিশুদের জিহাদি বা পাকিস্তানি বলাটা প্রচলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

এ ঘটনা প্রসঙ্গে ভারতীয় রাজনীতিবীদ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিক শশী থারুর লিখেছেন, 'এটা অবিশ্বাস্য। আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে এটি আমাদের দেশে ঘটছে। আর যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে এখনও গ্রেফতার হয়নি। এই ঘটনায় সমস্ত ভারতীয়দের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়। এই ধরনের ঘটনা আমাদের সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার এবং স্বাধীনতাকে কেড়ে নিতে পারে।'

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন