নেত্রকোনায় বিএনপির ১৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
পুলিশের ওপর হামলা,সরকারি কাজে বাধা, সংঘর্ষ, নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে নেত্রকোনার তিনটি থানায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১০৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিরা অজ্ঞাতনামা আসামি। এরমধ্যে পূর্বধলা উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জনকে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে পূর্বধলা, কলমাকান্দা ও মদন থানায় এসব মামলা করা হয়।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে নেত্রকোনা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গ্রেপ্তার ১৩ জনের মধ্যে ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন পূর্বধলা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আল হেলালী, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শফিকুল ইসলাম সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, যুবদল কর্মী মো. আল আমিন খান, রাহাতুল ইসলাম, মো. লাল চান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. আবদুল কাদির, বিএনপি কর্মী মুঞ্জু মিয়া, সোহরাব হোসেন, মো. সোহাগ মিয়া ও বকুল দত্ত।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা বিএনপি গতকাল শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সকাল নয়টায় উপজেলা সদরের রেলগেট এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান শেষ হয় বেলা একটার দিকে। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৩ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে আটক নেতা-কর্মীসহ ৫৪৫ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিস্ফোরক–জাতীয় দ্রব্য, দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। হামলায় থানার এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) পুলিশের চার সদস্য আহত হন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা বাদী হয়ে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এদিকে কলমাকান্দা উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন কলমাকান্দা থানার এসআই জয়নাল আবেদিন। এতে আসামি করা হয়েছে ২৮৫ জনকে, তাঁদের মধ্যে মধ্যে এজাহারনামীয় আসামি ৩৫ জন।
কলমাকান্দা থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাতটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানায় গতকাল রাতে ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
গতকাল বিকেলে এক সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বাড়িভাদেরা এলাকায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. লুৎফুজ্জামান বাবরের বাড়ির সামনের পুকুরপাড় থেকে তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মদন থানার ওসি মো. তাওহীদুর রহমান। এ ঘটনায় রাতে এসআই মো. শাহজাহান সিরাজ বাদী হয়ে ১৭৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। তাঁদের মধ্যে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপিকে অস্তিত্বসংকটে ফেলতে ও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে এভাবে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে একের পর এক গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তবে এসব করে বিএনপিকে দমানো যাবে না।