আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

কন্যা সন্তানের মা হলেন চতুর্থ শ্রেণির সেই ছাত্রী

নাটোরের গুরুদাসপুরে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির সেই শিশুটি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকটির জন্ম দিয়েছে ১১ বছরের এ শিশুটি। মা এবং নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছে।

জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্গিস তানিমা ফেরদৌস ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ফেরদৌস রহমানসহ ছয় সদস্যের চিকিৎসক টিম শিশুটির সিজারিয়ান অপারেশন করেন।

জানা গেছে, কন্যা শিশুকে দত্তক নিতে হাসপাতালে অনেকে আসছেন।

ওই স্কুল ছাত্রীর দাদী হালিমা খাতুন জানান, আমি গরিব মানুষ অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো মতে সংসার চলে। প্রয়াত স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস কিছুদিন আগে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তা দিয়ে তার খরচ করেছি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নারগিস তানজিমা জানান, স্কুলছাত্রীর অনেক কম বয়স। ফলে মা ও নবজাতক শিশুকে নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। আমরা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে আলোচনার মাধ্যমে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে শিশুটির শরীরে রক্তের মাত্রা কম থাকায় দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আল্লাহপাকের রহমতে সফলভাবে সন্তান জন্ম নেয়। অপারেশনের মাধ্যমে ৩ কেজি ওজনের ফুটফুটে সন্তান জন্ম দিয়েছে ওই শিশু। বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, সরকারিরভাবে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ওই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ আগেও তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সামনেও শিশুসহ তার মাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

নবজাতককে কোলে নিয়ে শিশুটির চাচি অভিযোগ করেন, নবজাতক জন্ম নিয়েছে ঠিকই, তবে পরিচয় নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পিতা-মাতা হারা শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল প্রতিবেশি দাদা জাহিদুল খাঁ (৫৫)। জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পরিবারে। কারণ জাহিদুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে হুমকি দিচ্ছে তার স্বজনেরা। ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার শিশুটির দাদির মামলায় জাহিদুল খাঁকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে জাহিদুল কারাগারে আছেন।

শিশুটি জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ছিল। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেন। ওই ঘটনায় সে দুইদিন অসুস্থ ছিল। ভয়ে বাড়ির বাহিরে যাওয়া হয়নি।

শিশুটির পরিবার জানিয়েছেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হলেও শিশুটির দাদি বাদী হয়ে ১৮ জুন ধর্ষণ মামলা করেন। পরদিন ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। মামলার বাদী শিশুটির দাদি জানান, এখন তারা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শিশুর চাচা জানান, শিশুটির বাবা-মা দুজনেই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগি শিশুর পরিবারকে সব ধরণের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

অভিযুক্ত জাহিদুল খাঁ (৬০) গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন