অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই ভূমি আইন ঠিক করেছি: ভূমিমন্ত্রী
অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন‘ প্রণয়ন করতে হয়েছে। অনেকেই বলেছিলেন যে এটাতে হাত দিলে হাত পুড়েও যেতে পারে। বললেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে 'ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন- ২০২৩' এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেছিলেন যে এটাতে (ভূমি আইন) হাত দেয়াটা কি উচিত হবে কিনা এবং হাত দিলে হাত পুড়েও যেতে পারে। কারণ এটা খুব সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) বিষয়।
দলিল যার, জমি তার অর্থাৎ দখলে থাকলেই হবে না, জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও থাকতে হবে, এই বিধান রেখে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে 'ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল–২০২৩’ পাস হয়েছে। এখনো এটিতে রাষ্ট্রপতি সই করেননি।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা আজকে অত্যন্ত আনন্দময় মুহূর্তে প্রেস কনফারেন্স করছি। এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ও ঐতিহাসিক দিন আমাদের জন্য। গতকালকে যে তিনটি বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিলটি ছিল সেটি হল ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন। যেটা অধিক আগ্রহের, দীর্ঘদিন ধরে দেশবাসী অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। অনেকে একটু হতাশ হয়ে গিয়েছিল মাঝখানে, এটা মনে হয় আর আলোর মুখ দেখবে না। আল্লাহর অশেষ রহমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান, সাহসিকতার কারণে আমরা জাতিকে একটি সুন্দর বিল উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি। এটা আসলে খুবই প্রয়োজন ছিল।
মন্ত্রী বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী যখন পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন আমি আস্তে আস্তে উপলব্ধি করলাম, কিভাবে মানুষকে হয়রানি, প্রতারণা থেকে বাঁচানো যায়। ধীরে-ধীরে আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এই জিনিসগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করি। এটার দীর্ঘ সময় লেগেছে। এটা একটা বিশাল জিনিস এবং এটা অনেক জটিল। এই জটিলে হাত দেয়াটা একটা সাহসিকতার বিষয় ছিল এবং শুরুতে আমাকে অনেকেই বলেছিল যে এটতে হাত দেয়াটা কি উচিত হবে কিনা এবং হাত দিলে হাত পুড়েও যেতে পারে। কারণ এটা খুব সেনসিটিভ। এখানে আইনের অনেক বিষয় আছে। তাদের বলেছিলাম, আমার তো সিনসিয়ারিটি আছে এবং প্রধানমন্ত্রীও চায় এদেশের মানুষকে সেবা দিতে। আমরা সেবক হিসেবে থাকতে চাই। সুতরাং তার যেহেতু সাপোর্ট আছে, আমার মনে হয় আল্লাহর রহমতে আমি যদি চেষ্টা করি, সেটা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, এটার পেছনে অনেক কাজ করতে হয়েছে। পেছনের চিত্র আপনারা (সাংবাদিক) অনেক কিছু দেখেননি। আমাদের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাই কিন্তু মোটামুটি সার্বিকভাবে কাজ করেছেন। তাদের আন্তরিকতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। না হলে কিন্তু আমার একার পক্ষে আসলে এটা সম্ভব হতো না। কারণ এখানে অনেকগুলো বিষয় আছে।
ভূমি আইনে যা আছে-
ভূমি নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করলে সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর। এখন থেকে জালিয়াতি ও প্রতারণা, ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যেই বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যের জমি নিজের বলে প্রচারণা, তথ্য গোপন করে অন্যের কাছে হস্তান্তর-এমন অপরাধ ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়বে। যার সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর এবং এটি অজামিন যোগ্য। আইনের ৪ ও ৫ নম্বর ধারা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আর বিভাগীয় কমিশনার নিষ্পত্তি করবেন। এছাড়া অন্য অপরাধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট বিচার করবেন। সাজা সর্বোচ্চ ২ বছর। নতুন আইনে আরও যা থাকছে- কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি জমি রাখতে পারবেন না। উত্তরাধিকার সূত্রে যাদের এর চেয়েও বেশি আছে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার বাকি জমি নিয়ে নিবে। সরকারি বেদখলকৃত জমি, সরকার যখন প্রয়োজন মনে করবে তখনই দখল মুক্ত করতে পারবে।