রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেন, ওআইসিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের(ওইআইসি)প্রতি আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের সভায় দেওয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ আহবান জানান। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও তিনি জানান।
রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার পর গত ছয় বছরে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করেছে তা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংখ্যা এবং পরিবেশের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও কোনো অগ্রগতি হয়নি উল্লেখ করে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রত্যাবাসন ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গা জনগণ হতাশায় ভুগছে এবং ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সমর্থন কমে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৩০ শতাংশ পাওয়া গেছে। ফলে তাদের জন্য খাদ্য রেশন কমে গেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। ড. মোমেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের জবাবদিহির জন্য গাম্বিয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশ এই মামলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সভায় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবে ওআইসিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ওআইসির মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহার পরিচালনায় আলোচনায় অন্যদের মধ্যে তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, গাম্বিয়া, জিবুতি, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাই ও সেনেগালের প্রতিনিধি অংশ নেন।